কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে সৎ মায়ের সাথে দ্বন্ধের জেরে সৎ মামাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা হিলচিয়া ইউনিয়নের বালিগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
জানা যায়, মালয়েশিয়া প্রবাসী আক্কাস আলীর বড় ছেলে মো. সাকিব আহমেদ (২৩) ও ভাতিজা সোহেল মিয়া (২৫)সহ তাদের সঙ্গীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ঘটনায় দুইজন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। আহতরা হলেন প্রবাসী আক্কাস আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী শিপন বেগমের (৩৫) আপন ভাই মো. আবদুল মতিন (৩৬) ও প্রবাসী আক্কাস আলীর আপন বড় ভাই জজ মিয়া (৬০)।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী আক্কাস আলীর প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে একই এলাকার শিপন বেগমকে বিয়ে করেন। শিপন বেগমের ঘরে শিমুল আক্তার (১৮) ও ইব্রাহীম (১২) নামে দুজন সন্তান রয়েছে। আগের স্ত্রীর সাকিব আহমেদ নামে এক ছেলে রয়েছে।
মাসখানেক আগে আড়াই বছর পর সৌদি আরব থেকে ফেরত আসেন সাকিব। এরপর বেকার জীবনযাপন করছেন। সৎ মা শিপন বেগম ও সৎ ছেলে সাকিবের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই মনোমানিল্য চলছিলো।
গত ৩ নভেম্বর রবিবার রাত আটটার দিকে সৎ মামা আবদুল মতিন বোনের বাড়ি গেলে সৎ ভাগিনার সাথে তর্কবিতর্ক হয়। দুজনেই মারমুখো ও একে অপরের প্রতি চড়াও হন। এ ঘটনা দেখে চাচাতো ভাই সোহেল মিয়া ও অন্যান্যরা এগিয়ে আসলে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
এ বিষয়ে সৎ মা শিপন বেগম বলেন, আমার ভাই তার পাওনা এক লক্ষ টাকা নিতে আসলে আমার সৎ ছেলে ও তার চাচাতো ভাই দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। একটু আগে সে আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছিলো। সে মাদকসেবী। এ পর্যন্ত অনেক টাকা দিয়েছি আর কত দিবো! আমার ভাইকে টাকা দিছি দেখেই সে মারমুখো হয়ে আমার ভাইকে তার চাচাতো ভাইসহ অন্যান্যরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। আটকাতে গেলে আমিও আমার মেয়ে লাঞ্চনার শিকার ও আহত হই। আমার ভাইয়ের মোটর সাইকেলটিও তারা কুপিয়ে তছনছ করে দিছে।
তিনি আরো বলেন, তার ভয়ে আমি বাড়িতে থাকতে পারি না। ছেলে মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি থাকি। তাকে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করে আমার ভাই বিদেশ পাঠালে সে ওখানে জুয়া ও চুরি করে। পরে তাকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
দেশেও চুরি করতো। সে নিয়মিত মাদকসেবন করে আমাকে বিভিন্ন অত্যাচার নির্যাতন করে।
এ বিষয়ে সাকিবের বক্তব্য জানতে গেলে তিনি বলেন, আমি বিদেশ থেকে মাইর খেয়ে চলে আসছি একমাস হইছে। সৎ মা আমাকে একবেলাও রান্না করে খাওয়াইনি। আমাকে সে দেখতে পারে না। গ্যাসের চুলায় আমি রান্না করতে গেলে সে বাঁধা দিয়ে বলে সে সবকিছু নিয়ে চলে যাবে। পরে আমাকে শাসানোর জন্য সৎ মামাকে এনে আমাকে মারধর করতে থাকলে আমার চাচাতো ভাই এসে বাঁচায়।
তবে সৎ মায়ের সন্তান ইব্রাহীম ও শিমুল আক্তার মায়ের পক্ষ নিয়ে বলে, মামা টাকা নিতে আসলে সাকিব ও সোহেল মারধর করে। শিমুল আটকাতে গেলে তার পিঠেও ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে। মামার মাথা, আঙুল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় তারা নির্মমভাবে কুপিয়েছে।
অভিযুক্ত সোহেল মিয়া বলেন, সাকিবকে মারধরের খবর পেয়ে আমি গিয়ে প্রতিহত করি। আমি নিজেও আহত হয়েছি।
এ বিষয়ে বাজিতপুর থানার অফিসার ইনটার্জ মুরাদ হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় পনেরো দিন আগে সোহেলের সাথে মতিনের একটা দ্বন্ধ হয়েছিলো। স্থানীয়ভাবে তার মীমাংসও হয়েছিলো। কেউ কেউ বলেন, ওই ঘটনার জের ধরেই সোহেল পূর্বপরিকল্পিতভাবে আবদুল মতিনকে বোনের ঘরে পেয়ে মারধর করে।