আনজার শাহ্, স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ৫ দিন। ঈদ উপলক্ষে কুমিল্লা নগরসহ সমগ্র জেলায় এ বছর স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৪৯০টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে কুমিল্লা আর্দশ সদর উপজেলার চৌয়ারা বাজারে গরু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার গো-খাদ্যের মূল্য চড়া থাকায় গরুপ্রতি খরচ বেড়েছে দেড়গুণ। তাই গ্রাহকদেরও চড়ামূল্যে গরু কিনতে হবে।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হাটে নির্ধারিত সময়ের আগেই ব্যবসায়ীরা গরু, মহিষ তুলতে শুরু করেছেন। তবে হাটে গরু-মহিষের দেখা মিললেও ছাগলের দেখা মেলেনি। হাটের পশু বেপারি শামীম সর্দার বলেন, ক্রেতার সমাগমও এখন কম। তবে ক্রেতারা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার পশুর দাম একটু বেশি চাচ্ছেন বেপারীরা। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় পশুর দাম এবার কিছুটা বাড়তি চাওয়া হচ্ছে।
গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি হওয়ায় অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারাও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণেই এবার পশুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার খামারি জসিম মিয়া বলেন, কোরবানি উপলক্ষে এ বছর ২০টি গরু বাজারে এনেছি। ইতোমধ্যে ৩টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি ১৭টি বিক্রি করার অপেক্ষা করছি। কাস্টমার এসে দেখে যাচ্ছেন। আমাদের আর কাস্টমারের দামের মধ্যে বিশাল ব্যবধান। তাই বিক্রি করতে পারছি না। আশা করি ঈদের আগে সবগুলো গরু বিক্রি করতে পারবো।
গরু কিনতে আসা সাগর মিয়া বলেন, এ বছর গরুর দাম অনেক। এতোটাই দাম যে পশু পছন্দ হলেও কেনার উপায় নেই। ঈদেরও আর বেশিদিন নেই। কোরবানির জন্য পশু কিনতেই হবে। দেখা যাক, ভাগ্যে কি আছে।
আবদুর রহিম নামের এক ক্রেতা বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি, পশুর দামও বেশি। আমাদের বেতন তো আর বাড়েনি। তাই এবার কোরবানির পশু কিনতে এসে দুইদিন ফিরে গেছি। আশা ছিলো শেষ সময় দাম কমবে। কিন্তু দাম কমার যেন কোনো নামই নেই। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে কোরবানি দিতে পারবো বলে মনে হয় না।
গরুর খামারি শফিক মিয়া বলেন, ভারতীয় গরু কম আসায় আমরা ন্যায্য দাম পাচ্ছি এবার। আশা করি আগামী দুইদিনও বাজার ঠিক থাকবে। দ্রব্যমূল্য বেশি, গরুর খাবারের দাম বেশি। আমাদেরও তো চলতে হয়।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এবার স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে অন্তত ৪৯০টি কোরবানির পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী পশুর হাট ৩৮টি, অস্থায়ী ৩৯৪টি। সবচেয়ে বেশি পশুর হাট বসেছে মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় ৪১টি করে। এছাড়া চৌদ্দগ্রামে বসবে ৩৬টি। অনলাইনেও চলছে পশু বেচা-কেনা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার ২ লাখ ৭৯ হাজার ১২০টি পশু কোরবানির চাহিদা আছে। তার বিপরীতে এবার পশু রয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮৮টি। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন জেলায় কোরবানির জন্য যে পরিমাণ পশু রয়েছে তাতে চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১০ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, চাঁদাবাজি ও হয়রানি রোধ, জাল টাকা সনাক্তের জন্য মেশিন স্থাপন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা পুলিশ বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কুমিল্লা নগরসহ সমগ্র জেলায় আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি, আমরা প্রতিটি হাট তদারকি করছি যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। এছাড়াও, হাসিল নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয় তাই আমরা প্রকাশ্যে হাসিল আদায়ের নির্দেশ দিয়েছি।