কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিরুদ্ধে হামলা ও গুলির অভিযোগ উঠেছে।
আজ শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে নগরীর পুলিশ লাইন্স এলাকায় শিক্ষার্থীদের মিছিলের পেছন থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা করে তারা। এসময় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা গেছে।
নগরীর রাণীর দিঘির দক্ষিণ পাড় ও বাগিচাগাঁও এলাকায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১০ গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী আহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫ জন গুলিবিদ্ধের কথা স্বীকার করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাগিচাগাঁও ও পুলিশলাইন্স এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়। এসময় হকিস্টিক, লাঠি ও স্টাম্প দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাও করেন তারা।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লা জিলা স্কুল এলাকায় গণমিছিলের উদ্দেশ্যে অবস্থান নেন দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। এসময় তারা বিভিন্ন ধরনের গান, কবিতা আবৃত্তি ও স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের বাধা দিতে দুই পাশে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। তাদের উদ্ধার করতে আসে ছাত্রদের আরেকটি মিছিল। সেটি সার্কিট হাউস মোড়ে এসে অবস্থান নেয়। প্রশাসন ও পুলিশের আশ্বাসে তারা একত্রিত হয়ে মিছিল শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সামনে যান।
ডিসি অফিস, কুমিল্লা কারাগার, সিটি করপোরেশন ভবনের সামনে দিয়ে তারা পুলিশলাইন্সে আসে। এসময় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর মিছিলের পাশে ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেখে শিক্ষার্থীরা চলে যান। মিছিল শেষ হতেই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি শুরু করেন ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। কয়েকজন শিক্ষার্থী রাস্তায় পড়ে গেলে তাদের বেদম পিটুনি দিতে দেখা যায়। আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়।
এরপর টাউনহল মোড় থেকে টমসম ব্রিজ রোডের সিএনজি স্টেশন, ভিক্টোরিয়া কলেজ গেইট, রাজগঞ্জ মোড়, জিলা স্কুল গেইটসহ বিভিন্ন গলিতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে শর্টগান, রামদা, লাঠি নিয়ে মহড়া দেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক দেখলেই মারধর ও হুমকি দিতে থাকেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া শিক্ষার্থী জোবায়দা ইয়াসমিন মুমু বলেন, সারা দেশের সাথে সমন্বয় করে আজকে(সোমবার) আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এখানে আমাদের একটাই দাবি সরকারের পদত্যাগ। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া শিক্ষার্থী সমাজ আর ঘরে ফিরবে না। কুমিল্লার সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্ট পয়েন্টে অবস্থান করে আমাদের বাধা দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার সামনে আমার এক ভাইকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। আরেকজনের হাতে গুলি লেগেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জান্নাতুল ইভা বলেন, আমাদের অনেকে আহত হয়েছে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। কতজন আহত হয়েছে এখনো সঠিক তথ্য পায়নি ,তবে ৫০ জনের উপরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পরিচালক শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, হাসপাতালে পাঁচ জন ভর্তি রয়েছেন। আমরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি, পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খোকন বলেন, আমরা কারও ওপর হামলা করিনি। ছাত্রদের সাথে শিবির ও বিএনপির লোকেরা একাকার হয়ে দেশকে নাশকতার দিকে নিতে চায়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।
চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৌম্য সরকার জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনায় আমরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করে ফিরিয়ে দিচ্ছিলাম। এ সময় ইউএনও এবং আমি গাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ করে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা আমার গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। আমরা গাড়ি থেকে বের হয়ে যাই।
এ বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সাইদুর ইসলাম বলেন, দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে আমরা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে, এখন পরিবেশ শান্ত।