আমাদের দেশের জলাশয়ে জন্মানো অর্ধ-জলজ উষ্ণমণ্ডলীয় লতা কলমি শাক স্থানীয় জাতের উৎপাদন কম। তবে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৮৩ সালে ‘ গিমা কলমি-১’ নামে একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে যার ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। দেশে বাণিজ্যিকভাবেও শুরু হয়েছে এই কলমি শাক চাষ। কুষ্টিয়ায় কলমি শাক চাষ করে অনেকের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। দিন দিন এখন কলমি শাক চাষ বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কৃষাণ-কৃষাণীরা মাঠের জমিতে পরিকল্পিত উপায়ে চাষ করছেন কলমি শাক। বাজারে ভালো দাম থাকায় কলমি শাক চাষে আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণী। স্বল্প খরচ আর অধিক লাভের কারণে উপজেলায় এর চাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
খাল-বিলের ধারসহ আনাচে-কানাচে বেড়ে ওঠা কলমি গাছকে স্থানীয় লোকজন এক সময় গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে গণ্য করতেন। সেই কলমি গাছের কচি পাতাই এখন এ এলাকার কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কলমি শাক বিক্রি করে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন। অনায়াসে সংসারের একটা বড় প্রয়োজন মিটছে কৃষকের।
মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া এলাকার আরব আলী ১৫ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কলমি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তার কলমির ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে ক্ষেত যেন সবুজের চাদরে ঢাকা।
কলমি চাষ সম্পর্কে আরব আলী বলেন, আমি ১৫ কাঠা জমিতে কলমি চাষ করেছি। বর্তমানে কলমি শাক বাজারে বিক্রি করে আমার ভালোই আয় হচ্ছে। এই কলমি শাক জমির একদিক থেকে কেটে বাজারে বিক্রি করি, আবার কিছু দিন বেড়ে ওঠে। ভেড়ামারায় আজিজুল হক বলেন আমি ১০ কাঠা জমিতে কলমি চাষ করে সফলতা পেয়েছি।
সদর উপজেলার খোর্দ বাখইল গ্রামের হোসেন আলী জানান, তিনি দেড় কেজি বীজে এক বিঘা জমি চাষ করেছেন। জমি তৈরির সময় গোবর এবং অন্যান্য সার সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করে বীজ বপন করলে অল্পদিনেই তা বাজারজাত করতে পেরেছেন।
মজমপুর গেট এলাকায় রাতের বাজারে সবজির পসরা নিয়ে বসেন মতিয়ার। তিনি দুপুরের পর বিত্তিপাড়া, ঝাউদিয়া এলাকা থেকে সবজি সংগ্রহ করে রাতে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘এখানের ক্রেতারা মুলত চাকুরীজীবি। তারা প্রতিদিন অল্প অল্প করে বাজার করেন।’ প্রতি আঁটি ১০ টাকা করে প্রতিদিন প্রায় ১০০ আঁটি শাক বিক্রি করেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে কলমি শাকের বীজ উৎপাদনকারী অনেক চাষী বলেন, বীজ তৈরির চেয়ে কলমি শাক চাষে খরচ কম এবং লাভ অনেক বেশি। তাদের অনেকেই আগামী মৌসুমে বীজ চাষের পরিবর্তে কলমি শাক আবাদ করবেন জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.হায়াত মাহমুদ বলেন, এবার কলমিসহ নানান শাক-সবজির চাষ হয়েছে প্রায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। কলমি শাকের পুষ্টিগুণ থাকার কারণে বাজারে কলমি শাকের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৬৯ হেক্টর জমিতে কলমি শাকের চাষ হয়েছে।