পর্ব-২ : ঢাকার কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারি ও তার অফিস সহকারী লায়লা আক্তার তুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটাতে পারেনি আইন মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেউই। জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রাজস্ব লুট করছে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। তার মধ্যে ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারি ও তার অনুসারী কিছু দলিললেখক। তারা নাল জমিকে ডোবা ও আমন লিখেন দলিলে। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও সব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রার ও কিছু দলিললেখক। এ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন অফিস সহকারী লায়লা। এরপর সেখান থেকে তাকে বদলি করতে মরিয়া হয়ে ওঠে ওই চক্রটি। বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রার সাবেকুন নাহারকে জানান অফিস সহকারী তুলি। পরে কোনো ব্যবস্থা নেননি ডিআর। বিষয়টি আইজিআরকেও জানানো হয়।
এছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করছে দুদক। যার ডায়েরি নম্বর ১০৬৩২। তদন্ত কর্মকর্তা পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডল। এ বিষয়ে অফিস সহকারী তুলি বলেন, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানায় অভিযোগ করেছি। অভিযোগে লেখা হয়েছে, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করার পর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালজালিয়াতি দেখতে পাই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেলা সাব-রেজিস্ট্রার সাবেকুন নাহার সরকারকে লিখিতভাবে জানানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ওই সব অসাধু দলিললেখক ও সাব-রেজিস্ট্রার স্যার অনৈতিক, অশালীন ইঙ্গিতসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করতে থাকেন। এর আগে সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারি দলিললেখক দিয়ে আইজিআর বরাবর তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট কথা লিখে আবেদন করালে এ ব্যাপারে অফিস বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়। অথচ যারা এ আবেদন করেছে তাদের রহস্য ফাঁস করে দিয়েছে নিজেরাই।
অফিস সহকারী তুলি আরো জানান, গত জানুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে তিনি সরকারি কার্য সম্পাদন অবস্থায় অফিসের এজলাসের সামনে সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারি দলিল লেখকদের ইন্ধন দেন। পরে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন সেন্টুর নেতৃত্বে আমাকে হেনস্থা করে। দলিললেখক ও সাব-রেজিস্ট্রারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি বললে, আমাকে অগথ্য ভাষায় কথা বলতে থাকে এবং আমার নেকাব খুলতে বাধ্য করে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার নিজেও। সরকারি অফিসে কর্মরত অবস্থায় সরকারি কাজে বাধা, এজলাসের সামনে সংবাদ সম্মেলন, একজন মহিলা কর্মচারীকে নেকাব খুলতে চাপ প্রয়োগ, অনুমতি ব্যতীত ভিডিও ধারণ, অশালীন আচরণ সম্পূর্ণ বেআইনি ও বিধিবহির্ভূত । বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
তাছাড়া থানায় অভিযোগে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন যে, তার কোনো ধরনের ক্ষতি হলে সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার দায়ী থাকবেন। তুলি বলেন, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর যারা রাজস্ব লুটসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ বিষয়টি শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই জানেন। অনেকের কাছেই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।
সাব-রেজিস্ট্রার মৃত্যুঞ্জয় শিকারি দৈনিক জাতীয় অর্থনীতির ইনভেস্টিগেশন টিমকে বলেন, অফিস সহকারী লায়লা আক্তার তুলির বিরুদ্ধে দলিললেখকরা হয়রানিসহ নানান অভিযোগ করেছেন আইজিআর বরাবর। এতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানান মিথ্যা রটানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।