ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ চোখ জুড়ানো পানের বরজ ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার গ্রামে গ্রামে। সাফদারপুর, মানিকদিহি, দুতিয়ারকুটি, জালালপুর, ছয়খাদা, শ্রীরামপুর পানের বরজের সমারোহ ।
মানিকদিহি গ্রামের পানচাষী খোদাবকস জানান, গত কয়েক বছর সংসারে চরম অভাব আর টানাপোড়নের মধ্যে জীবনযাপন করেছি। গত ২০১৫ সালের শেষের দিকে দুতিয়ার কুটি পানচাষী মইদুল ইসলামের সাথে সংসারের অভাবের গল্পের একপর্যায়ে তিনি আামাকে পানচাষে উৎসাহিত করেন।
তিনি জানান ১ম বছরে আমি দুতিয়ারকুটি সহ বিভিন্ন গ্রাম হতে চেয়ে চিন্তে আমি ১ বিঘা উঁচু জমিতে পানের বরজ করি। বাঁশ, খুটি, পাটকাঠি, দড়ি, সুতা ইত্যাদি সংগ্রহ করার পর আমি কিছু টাকা ধার করে পানের বরজ শুরু করলাম।
১ বছরের মাথায় খরচের টাকা উঠে প্রায় অতিরিক্ত ৩০/৪০ হাজার লাভের মুখ দেখলাম। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে আরও ২ বিঘা জমিতে পানের বরজ করলাম। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমার সংসারে এখন কোন অভাব নেই।
দুতিয়ারকুটি পানচাষীদের মধ্যে তরিকুল জানান, তাঁর প্রতিবছরে খরচবাদে প্রতি বিঘা জমিতে পানে বরজ হতে ১/২ লাখ টাকা আয় হয়।
তিনি জানান, পানের বরজ প্রতি বিঘা জমিতে প্রথম বছর প্রায় ৫০/৬০ হাজার খরচ হয়। সেক্ষেত্রে পানে চাষে প্রতি বিঘা জমিতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ২ লাখ টাকা আয় হয়। পানের বরজ এর সুবিধা হচ্ছে প্রথম বছরে খরচ তারপরে একটানা ওই বরজ হতে ১০/১২ বছর আয় হয়।
পানচাষ করে কোটচাঁদপুর উপজেলার সহিদুল, আব্দুল খালেক, আব্দুর রউফ , হাসান, বাবু রায়, কার্তিক সহ অনেকেই আলোর মুখ দেখেছেন। কোটচাঁদপুরের পান স্হানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা সহ দেশে বিদেশে এই পান বিক্রয় হচ্ছে। পানচাষীরা তাদের ক্ষেত হতেই পান বিক্রয় করছেন পান ব্যবসায়ীদের নিকটে। যোগাযোগ ব্যবস্হা উন্নত হওয়াই চাষীরা এই সুবিধা পাচ্ছেন।
রাইপুর গ্রামের সুবাল চন্দ্র বললেন সরকারী ভাবে কমমুল্যে কৃষি ঋনের সুব্যবস্থা করা হলে কোটচাঁদপুর উপজেলায় পানচাষে বিপ্লব হবে।
কৃষি অফিস সূত্রে জনা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় শতাধিক হেক্টর জমিতে পানের চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পানচাষীদের নিয়মিত দেখভাল আর পরামর্শ প্রদান করায় চাষীরা সাফল্যের মুখ দেখছে।
জালালপুরের পানচাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর কোটচাঁদপুরে পানের বরজ হতে পানচাষীদের পান চাষে বাম্পার ফলন হবে। তবে কোটচাঁদপুরে গতবছরের আম্ফানে পানের বরজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আকস্মিক আগুনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, স্বল্পমূল্যে পান চাষীদের ঋণ দেওয়া হলে তারা আবারও ঘুড়ে দাঁড়াবে।