বাংলাদেশের ম্যাচে এমনটা প্রায়ই হয়। যেদিন ব্যাটসম্যানরা খারাপ করেন, সেদিন বোলাররা এমন বোলিং করেন, তখন আক্ষেপ হয়। ইশ্, কেন যে স্কোরবোর্ডে রানটা বেশি উঠল না! আবার যেদিন ব্যাটসম্যানরা ভালো করেন, সেদিন যেন বোলার-ফিল্ডাররা মিলে পেছন থেকে টেনে ধরনের দলকে। আজ ক্রাইস্টচার্চে আক্ষরিক অর্থে যেন সেটিই হলো আজ। স্কোরবোর্ডে ২৭১ রান ওঠার পরেও বোলারদের বাজে বোলিং আর ফিল্ডারদের ক্যাচ ফেলার মহড়ায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজও হেরে গেছে সফরকারীরা।
‘ক্যাচ মিসের মহড়া’ কথাটা অতি ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে গেলেও মুশফিকুর রহিম ক্যাচ মিসকে যেন নিয়মই বানিয়ে ফেলেছেন। আজ তিনি জিমি নিশামের যে ক্যাচটি ফেলেছেন, সেটি মুশফিকের মতো একজন অভিজ্ঞ উইকেটকিপারের জন্য বড় দৃষ্টিকটু। ওই ক্যাচটি ধরতে পারলে যে বাংলাদেশ হেসে খেলে ম্যাচ বের করে নিত, ব্যাপারটা তেমন না হলেও ওই সময় নিউজিল্যান্ডকে বিপদে ফেলা যেত। তার কিছুক্ষণ আগেই উইকেটে জমে যাওয়া ডেভন কনওয়েকে সরাসরি থ্রোতে রান আউট করে টম ল্যাথামের সঙ্গে তাঁর ১১৩ রানের জুটি ভাঙা গিয়েছিল। তবে মুশফিকের ক্যাচ মিসের চেয়েও বাংলাদেশের হার ত্বরান্বিত করেছ ল্যাথামের দুটি ক্যাচ ফেলে দেওয়া।
এই ল্যাথামই শেষ পর্যন্ত ১০৮ বলে ১১০ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। ল্যাথামের ক্যাচ প্রথমে কভারে ফেলেন মোহাম্মদ মিঠুন। সেটিকে যদি হাফ চান্স বলা হয়, তাহলে নিজের বলে তাঁর ‘লোপ্পা’ ক্যাচ ফেলে দেন শেখ মেহেদী। তবে ‘হাফ চান্স’ বলে মিঠুনের ব্যর্থতাও আড়াল করার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ‘হাফ চান্স’ দিয়েই ম্যাচের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশকে এর বাইরে রাখা কেন!
ল্যাথাম ছিলেন দুর্দান্ত। ৫৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর কনওয়ের সঙ্গে তাঁর জুটিটি দেখলেই সেটি বোঝা যাবে। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা বোধ হয় একেই বলে। আর বাংলাদেশকে পেলেই যে ল্যাথাম ভয়ংকর হয়ে ওঠেন, সেটা তো জানাই। আজ তিনি ১০৮ বলে ১১০ রান করলেন ১০টি বাউন্ডারি মেরে। দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাঠে নেমে এমন একটা ইনিংস! এসব জায়গাতেই আসলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে পার্থক্যটা গড়ে নেন অন্যান্য দেশের ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের ইনিংসের দিকে তাকান। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ধীর গতির ব্যাটিং করেছেন তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিম। পরে আর গতি বাড়াতে পারেননি। মুশফিক আউট হয়েছেন শেষ দশ ওভারের ঠিক আগে। আর ল্যাথাম ঠিকই চাপ সামলে, পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে ম্যাচ বের করে নেন দলের জন্য।
বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন খরচে। দুর্ভাগ্যের শিকার তাসকিন ১০ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৬৭ রান, কোনো উইকেট পাননি। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৬.৭। মোস্তাফিজ ২ উইকেট নিলেও ৮.৩ ওভারে দিয়েছেন ৬২ রান। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও ছিলেন বেশ উদার। ৭.২ ওভারে দিয়েছেন ৪৩ রান। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের যা কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছেন দুই ‘মেহেদী’, দুই অফ স্পিনার। শেখ মেহেদী তো নিজের প্রথম দুই ওভারেই হেনরি নিকোলস আর উইল ইয়ংকে আউট করে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন কিউই শিবির। কিন্তু মোমেন্টাম কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশের বাকি বোলাররা।
ডানেডিনের দুঃস্বপ্ন ক্রাইস্টচার্চে দূর করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের ৭৮ আর মোহাম্মদ মিঠুনের দুর্দান্ত ৭৩ রানের দুটি ইনিংস সেই দুঃস্বপ্ন দূর করার পথে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ যদি বাজে সময় আউট না হতেন, তাহলে রানও আরও বাড়ত, নতুন স্বপ্নও দেখতে পারত বাংলাদেশ। ২৭১ রান নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খুব বড় স্কোর নয়। ক্রাইস্টচার্চে তো আরওই নয়। এমন সংগ্রহে লড়াই করতে গেলে যে ধরনের দৃঢ়তার প্রত্যাশা ছিল, বোলিংয়ে নেমে সেটিই করতে পারেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
বোলিং কোচ ওটিস গিবসন ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বশীল হতে বলেছিলেন। আজ হোটেলে ফিরে তিনি বোলারদের নিয়ে যে আলাদা করে বসবেন, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। ফিল্ডিং কোচেরও কাজটা আজকের পর থেকে আরও একটু বেড়ে গেল। কোচ ডমিঙ্গোর জন্যও আগামী কয়টা দিন ব্যস্ততার। ২৬ মার্চ ওয়েলিংটনে শেষ ওয়ানডেতে নামার আগে দলকে নিয়ে অনেক কিছুই যে করতে হবে তাঁকে।