ক্যানসার গবেষণায় ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার করে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছেন আমেরিকার ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি গবেষক ড. মো. জসিম উদ্দিন। ক্যানসারের নির্দেশক কক্স-২ এনজাইমকে চিহ্নিত করতে তিনি আবিষ্কার করেছেন এক বিশেষ রাসায়নিক যৌগ। যার দরুণ মানব দেহে ক্যানসার আক্রামনের প্রাথমিক ধাপেই রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
জসিম উদ্দিনের আবিষ্কৃত ‘ফ্লোরকক্সিব-এ’ যৌগটি ইতিমধ্যেই ক্যানসার শনাক্তকরণে সফল হয়েছে। ‘ফ্লোরকক্সিব এ’ হলো প্যাটেন্টেড (Patent No. US 2010/0254910) এর একটি যৌগ; যা মানব দেহে প্রবেশ করলে ক্যানসার আক্রান্ত কোষে অতিমাত্রায় নিঃসারিত হওয়া ‘কক্স-২’ নামের এনজাইমের সাথে যুক্ত হয়ে আক্রান্ত কোষকে আলোকিত করে। ফলে খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায় ক্যানসার আক্রান্ত কোষ।
এই অভিনব আবিষ্কারের জন্য ড. জসিম উদ্দিন ও তার গবেষক টিম অর্জন করেছে ফাই বেটা সাইন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২২। কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের (CRC) প্রাথমিক শনাক্তকরণের উপায় এবং অস্ত্রোপচারে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করায় ফাই বেটা পিএসআই ট্রাস্ট তাদেরকে ৬৩,৪৭৩ মার্কিন ডলার অর্থ পুরস্কৃত করেছে।
এ প্রসঙ্গে গবেষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি এই পুরস্কারের জন্য ফাই বেটা পিএসআই ট্রাস্টের কাছে কৃতজ্ঞ, যা আমাদের গবেষণাকে ন্যানো প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করে আরো অগ্রসর হতে খুব অনুপ্রেরণা জোগাবে।’ জসিম উদ্দিনের এই কক্স-২ এনজাইমকে শনাক্ত করার আবিষ্কার প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে একটি আন্তর্জাতিক মেডিকেল জার্নালে। উদ্ভাবনের খবরটি মিডিয়ায় আসলে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানান সম্মাননায় ভূষিত হন।
মো. জসিম উদ্দিনের জন্ম নোয়াখালী জেলার বাটাইয়া গ্রামে। তবে বাবার চাকরিসূত্রে তার শৈশব কেটেছে ঢাকার জিগাতলায়। ঢাকার রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক সম্পন্ন করেন রসায়ন বিভাগে।
ছোট বেলা থেকেই তার জৈব যৌগের প্রতি আগ্রহ ছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকেই তিনি শিক্ষকদের সহযোগিতায় জৈব যৌগ নিয়ে নানা গবেষণা শুরু করেন। তার গবেষণার হাতেখড়ি হয় শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন আহমেদের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে জসিম উদ্দিন প্রবেশ করেন কর্মজীবনে। প্রথমে চাকরি করেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক প্ল্যান্টে।
দেশের গবেষণা খাতের অবস্থা তাকে ক্রমশই হতাশ করে তোলে। বিজ্ঞানের মৌলিক ও অপরিহার্য বিষয় গুলো তিনি গবেষণা করতে চাইলেও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা কোথাও পাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে মৌলিক গবেষণায় ভূমিকা রাখতে চাইলেও তখন পিএইচডি ডিগ্রি না থাকায় তাও সম্ভব হলো না।
শেষমেশ ১৯৯৭ সালে জাপান সরকারের মনবুসো (Monbusho) বৃত্তি নিয়ে চলে যান জাপানের শিনসু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ডক্টরাল গবেষণা করেছেন অধ্যাপক আইওয়াও ইয়ামমোটোর সঙ্গে। তারপর আলবার্টা হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমান কানাডায়। সেখানকার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগে ফ্যাকাল্টি হিসেবে গবেষণা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই গবেষণা সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।