গাইবান্ধায় ব্যবসায়ী হাসান আলী হত্যার বিচার দাবিতে গঠিত ‘হাসান হত্যার প্রতিবাদ মঞ্চ, গাইবান্ধা এর উদ্যোগে জেলার সাংবাদিকদের সাথে ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার জেলা জাসদ কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হাসান হত্যার প্রতিবাদ মঞ্চের আহবায়ক আমিনুল ইসলাম গোলাপের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় মঞ্চের সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মিহির ঘোষ, ময়নুল ইসলাম রাজা, ওয়াজিউর রহমান রাফেল, গোলাম মারুফ মনা, জিয়াউল হক জনি, মনজুর আলম মিঠু, গোলাম রব্বানী, মোস্তফা মনিরুজ্জামান, কাজী আবু রাহেন শফিউল্যাহ, মৃনাল কান্তি বর্মণ, রেজাউন্নবী রাজু, জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু প্রমুখ। জাহাঙ্গীর কবির তনুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গোবিন্দলাল দাস, দীপক কুমার পাল, অমিতাভ দাশ হিমুন, গৌতমাশিষ গুহ সরকার, শামীম উল হক শাহীন, উজ্জল চক্রবর্ত্তী, আরিফুল ইসলাম বাবু, হেদায়েতুল ইসলাম বাবু, রিকতু প্রসাদ, খালেদ হোসেন, শামীম আল সাম্য, এসএম বিপ্লব, মিলন খন্দকার প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, হাসান আলী হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ওসি (তদন্ত) ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করলেই হবে না তাদের গ্রেফতার করতে হবে। এই হত্যাকান্ডের দায় সদর থানার ওসি কোনভাবেই এড়াতে পারে না। তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, পুলিশকে বাচাঁনোর নানারকম ষড়যন্ত্র আমরা লক্ষ্য করছি। ইতোমধ্যে বাদির এজাহারে বর্ণিত ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে মিথ্যা ফরওয়ার্ডিং দেয়া হয়েছে। তারা এই মিথ্যা ফরওয়ার্ডিং এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং পুরো ঘটনার একটি বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। বক্তারা অতীতের তিশা হত্যা, সাজিদ হত্যার ঘটনায় বিচারের আন্দোলনের উল্লেখ করে বলেন, হাসান হত্যা মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহের ষড়যন্ত্র হলে গাইবান্ধাবাসী তা কঠোর হস্তে প্রতিহত করবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলীকে অপহরণ করে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানা। এরপর তাকে উদ্ধারের দাবিতে হাসানের স্ত্রী বিথী বেগম থানায় অভিযোগ করলে মাসুদের বাড়ি থেকে উদ্ধারের পর অপহৃত ব্যবসায়ী হাসান আলীকে আবারও অপহরণকারী মাসুদের জিম্মায় দেয় পুলিশ। টানা একমাস মাসুদের বাড়িতে আটক অবস্থায় থাকার পর গত ১০ এপ্রিল শনিবার মাসুদের বাড়ির টয়লেট থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর আগে মোবাইল থেকে ক্ষুদে বার্তায় হাসান আলী স্বজনদের জানান মাসুদ রানা তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করে এবং থানায় পুলিশের উপস্থিতিতে তার কাছ থেকে মিথ্যা অঙ্গীকার নেয়। ওই দিনই মাসুদকে আটক করে পুলিশ। পরদিন দলীয় পদ থেকে রোববার মাসুদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম বাদী হয়ে মাসুদ রানা, রুমেন হক খলিলুর রহমান বাবুকে আসামি করে সদর থানার দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ এনে সদর থানায় মামলায় করেন। ওই মামলায় মাসুদ রানাকে গ্রেফতার দেখিয়ে চারদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। অন্যদিকে ব্যবসায়ী হাসান আলীকে উদ্ধারের পর থানা থেকে অপহরণকারী মাসুদ রানার হাতে তুলে দেয়ার ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্ততা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাহাত গাওহারীকে আহবায়ক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খায়ের ও পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল লতিফকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। ওই কমিটি তদন্ত শেষে ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর এঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ব্যবসায়ি হাসান আলী হত্যার পরপরই হাসান আলী হত্যার বিচার দাবীতে ফুঁসে ওঠে গাইবান্ধার সর্বস্তরের মানুষ। মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। গঠন করা হয় হাসান হত্যা প্রতিবাদ মঞ্চ। এ প্রতিবাদ মঞ্চের উদ্যোগে লাগাতার আন্দোলন চলমান রয়েছে।