নদী বিধৌত জেলা গাইবান্ধার প্রায় দেড়শ’ বা তারও বেশি বালুচরে বসবাস লক্ষাধিক মানুষের। এসব চরের মধ্যে ফুলছড়ির ছাত্তারকান্দি চরে শতাধিক পরিবার রয়েছে। তারা সবাই ছিন্নমূলের মানুষ। নানা সমস্যায় দুর্বিষহ জীবনযাপন কাটছে তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের রসুলপুরের ছাত্তারকান্দি চরে গিয়ে দরিদ্র মানুষদের এভাবে বসবাসের করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে। ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে জেগে ওঠা ওই চরটিতে প্রায় ৪ শতাধিক মানুষ বহুবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময় রসুলপুরের ছাত্তারকান্দি চরে কেউ বসবাস করতেন না। দুই যুগ আগে রাক্ষুসি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের শিকার মানুষেরা বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করে সেখানে। ধীরে ধীরে শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি স্থাপন করা হয়। তবে এই চরের মালিকানা অন্যান্য ব্যক্তিদের। এইসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাৎসরিক চুক্তিতে নিজেরাই ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছে তারা।
প্রত্যেকটি পরিবারকে বার্ষিক ৫-৬ হাজার টাকা জমি মালিককে ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে। এখানকার প্রায় সব পরিবারেরই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস। পেশা হিসেবে দিনমজুরির কাজ করে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। একদিন অন্যের কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না তাদের। যেন নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা।
শুধু তাই নয়, বর্তমান প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর ঘোষণা দিলেও ছাত্তারকান্দি চরের মানুষ এখনও পায়নি সেই সুবিধা। দুর্গম এই চরটির ৪ শতাধিক মানুষ যেন অন্ধকারে বসবাস করে চলেছে। এতে করে নৌ চোরের আক্রমণে হারাতে হচ্ছে গবাদিপশুসহ সহায় সম্বল। এছাড়াও ছাত্তারকান্দি চরে সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী নৌকাযোগে নদীর ওপারে গিয়ে পাঠগ্রহণ করলেও তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় অভিভাবকদের। কারণ একটাই, প্রাথমিক স্তরের শিশুদের নৌযোগে স্কুলে যেতে হচ্ছে। কখন যেন কোন দুর্ঘটনা ঘটে এ নিয়ে আতঙ্কে তারা। আর আগের চেয়ে নৌকা ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ছিন্নমূল পরিবারের অভিভাবকদের চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে অধিকাংশ সন্তান শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়ছে।এর পাশাপাশি কোনো হাটবাজার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় নানা সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে তাদের। বিদ্যমান পরিস্থিতির শিকার ছাত্তারকান্দি চরের মানুষেরা তেমন কোনো সরকারি সুবিধাও পাচ্ছে না। এখানকার বেশকিছু বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্দি ব্যক্তি তাদের কাঙ্ক্ষিত ভাতাদি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন এবং নদীর ওপারে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরেও কোনো সুবিধা মিলছে না বলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে। ছাত্তারকান্দি চরের বাসিন্দা আব্দুস ছাত্তার, সেবাহান মিয়া ও রশিদা বেগমসহ আরও অনেকে বলেন, আমরা সবাই গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খেতে হয়। আমাদের জন্য নেই হাটবাজার-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও সরকারি সুযোগ-সুবিধাও আমাদের কপালে তেমনটি জোটে না।
কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল রানা শালু জানান, ছাত্তারকান্দি চরের মানুষদের সব ধরণের সরকারি সুবিধা পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, ওই চরের মানুষদের খোঁজ নিয়ে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা হবে।