ময়লা আবর্জনা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল।অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর দুর্গন্ধে চরম দূর্ভোগে পড়েছে রোগী ও তাদের স্বজনরা এমনকি চিকিৎসক ও নার্স রা ও । শুধু তাই নয় এই হাসপাতালে ইদুরে খেয়ে ফেলে লাশের চোখ এমন অভিযোগও আছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ-ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মাঝামাঝি ফাঁকা জায়গার মধ্যে পড়ে আছে অব্যবহৃত বালিশ, রোগীদের খাবারের উচ্ছিষ্ট। ড্রেনের নোংরা পানিতে ভাসছে মলমূত্র। নাক চেপে ধরে হাসপাতালের করিডোর পার হয় যেতে হয় রোগীদের ওয়ার্ডে। হাসপাতালের সিঁড়ির পাশে আগাছায় পরিপূর্ণ জমে থাকা ময়লা-পানিতে সৃষ্টি হয়েছে মশার নিরাপদ প্রজনন ক্ষেত্র। নিচতলা ও ওপর তলায় বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখা যায় ভাঙাচোরা চিকিৎসা সরঞ্জাম, বেড, ফোম, ম্যাট্রেস।
এত গেল বাহিরের চিত্র। ভেতরের বাথরুমের চিত্র স্বচক্ষে না দেখলে বর্ণনা করা বেশ কঠিন। পাঁচদিন ধরে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বাবার সঙ্গে থাকা দাড়িয়াপুরের হুমায়ুন কবীর মিলন বলেন, বাথরুমগুলোর কোনোটিই ব্যবহার উপযোগী নয়। কোনোটিতেই নেই সাবান, হ্যান্ডওয়াশ। পরিষ্কার না করায় মলমূত্রের দুর্গন্ধে বাথরুমে যাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, এসব বাথরুম ব্যবহার করলে যে কোনো সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
সম্প্রতি গাইবান্ধা সদরের রামচন্দ্রপুরের বালুয়া বাজারে প্রতিপক্ষের হামলায় মারা যান রোকন নামে এক ব্যবসায়ী। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণার পর তার মরদেহটি ফেলে রাখা হয় নিচতলায় সিঁড়ির নিচে। পরদিন দেখা যায় তার ডান চোখ নেই।
রোকনের স্বজনরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণে রোকনের চোখটি ইঁদুরে খেয়ে ফেলেছে। একজন মানুষ মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ থেকে চোখ গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা দুঃখজনক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহতের স্বজনরা।
কেবল রোগী বা স্বজন নয়, হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্সদেরও ভোগান্তির শেষ নেই। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত একজন সেবিকা আক্ষেপ করে বলেন, আমরা দিনরাত হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করি। হাসপাতালের টয়লেট ব্যবহার করতে পারি না।
হাসপাতালের বাইরে সহকর্মীদের বাসায় যেতে হয়। রাতের বেলা নার্সদের বিশ্রাম বা ঘুমানোর কোনো জায়গা নেই।
তিনি বলেন, যখন যে তত্ত্বাবধায়ক আসেন, তখন তারা শুধু নিজের কক্ষ আর নিজের বাথরুমটা ফিটফাট রাখেন, কিন্তু যারা সার্বক্ষণিক সেবা দেয়, তাদের দিকে নজর দেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জরুরি বিভাগে কর্মরত এক চিকিৎসক বলেন, রাতে যারা জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত থাকেন তাদের কষ্টের শেষ নেই। একটু বিশ্রাম বা ঘুমানোর কোনো জায়গা নেই। রাতের বেলা চেয়ার টেবিল সরিয়ে মেঝেতেই ঘুমাতে হয় তাদের।
আরেক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালের উপরে-নিচে অসংখ্য ভাঙা বেড, আসবাবপত্র, যন্ত্রাংশ ফেলে রাখা হয়েছে। এসব মালামাল নিলামে না দিয়ে যত্রতত্র ফেলে রাখায় রোগী-চিকিৎসক স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলাও করতে পারে না। অন্যদিকে, ব্লাড ব্যাংক ও প্যাথলজি মিলে মাত্র দু’জন টেকনোলজিস্ট। চারহাতে রক্ত, মলমূত্র পরীক্ষা আর করোনার নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে পড়ছেন তারা। ব্লাড ব্যাংকের ফ্রিজ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির বেশিরভাগই অকেজো। ভাঙাচোরা মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা নিরীক্ষা করায় ভুল রিপোর্ট আসার শঙ্কার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
এসব বিষয়ে কথা হয় জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মেহেদী ইকবালের সঙ্গে। তিনি জানান, হাসপাতালের স্যুয়ারেজ লাইনটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। বারবার গণপূর্ত বিভাগকে তাগিদ দিয়েও ড্রেনগুলো সচল করা সম্ভব হয়নি। পরিচ্ছন্নকর্মীরও সঙ্কট আছে।
অন্যদিকে, আউটসোর্সিংয়ে যারা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন, ২৫ মাস ধরে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায়, তাদেরও কাজের আগ্রহ কমে গেছে। এছাড়া, প্রয়োজনীয় মালামাল ও জনবল চেয়ে একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেওয়া হলেও তেমন সাড়ে মেলেনি।
গাইবান্ধার সাত উপজেলার লাখ লাখ মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এই জেলা হাসপাতালটিতে চিকিৎসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সচেতন মহল।