মিয়ানমারে বিবিসি বার্মিজ সার্ভিসের এক সাংবাদিকসহ দুজন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার রাতে সাদাপোশাকে এসে কয়েকজন ওই দুই সাংবাদিককে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। এদিকে অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিয়ানমারে আজ শনিবার আরও বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছেন দেশটির বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীদের ওপর জান্তা সরকারের দমন-পীড়ন বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো ও পশ্চিমা দেশও মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়েছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
রাজধানী নেপিডোতে একটি আদালতের বাইরে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করার সময় সাদাপোশাকে এসে কয়েকজন অং থুরা নামের বিবিসি বার্মিজের ওই সাংবাদিককে আটক করেন। অং থুরার সঙ্গে থান হিতিক অং নামে আরেক সাংবাদিককেও আটক করা হয়েছে। তিনি মিজিমা নামে স্থানীয় একটি সংবাদ সংস্থায় কাজ করতেন। এ মাসের শুরুতে জান্তা সরকার মিজিমার সম্প্রচার লাইসেন্স বাতিল করেছে।
স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে একটি গাড়িতে কয়েকজন এসে দুই সাংবাদিককে ধরে নিয়ে যান। বিবিসি অং থুরার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। বিবিসি এক বিবৃতিতে বলছে, মিয়ানমারে নিযুক্ত সব কর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবিসি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। অং থুরাকে খুঁজে বের করতে বিবিসি সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি শহরে সম্প্রতি বিক্ষোভ ও সহিংসতায় কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে এ পর্যন্ত ৪০ জন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। ১৬ জন সাংবাদিক এখনো কারাগারে রয়েছেন। জান্তা সরকার পাঁচটি গণমাধ্যমের লাইসেন্স বাতিল করেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, স্থানীয় সময় গতকাল অংবান এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আটজন নিহত হয়েছেন।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানান, ইয়াঙ্গুন ছেড়ে অনেকেই পালাচ্ছেন।
অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স গ্রুপ বলছে, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সহিংসতায় মিয়ানমারে কমপক্ষে ২৩২ জন বার্মিজ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ মার্চ নিহত হন ৩৮ জন।
মিয়ানমারের দক্ষিণের দাওয়াই শহরে বিক্ষোভকারী নেতা কিয়াও মি হাতিক রয়টার্সকে বলেন, ‘যেখানে কোনো পুলিশ, সেনাবাহিনী থাকবে না, সেখানে আমরা বিক্ষোভ করব। যখনই তারা আসবে, টের পাব, তখনই ছড়িয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাব। আমি চাই না কেউ মারা যাক। তবে আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব।’বেশ কয়েকটি শহরে মোমবাতি, ব্যানার ও ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
দমন–পীড়ন বন্ধে জান্তা সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসগুলো, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যৌথ বিবৃতিতে মিয়ানমারের নাগরিকদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। ওই বিবৃতিতে মার্শাল ল তুলে নিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে আটক সব ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে, জরুরি অবস্থা তুলে নিতে ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানানো হয়।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস স্থানীয় সময় গতকাল জান্তা সরকারের সহিংস আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন। মহাসচিবের মুখপাত্র বলেছেন, অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
জাতিসংঘের র্যাপোর্টার টম অ্যান্ড্রুজ টুইটে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।পশ্চিমা দেশের দূতাবাসগুলোও জান্তা সরকারের সহিংস আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন।
ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তেওদোরো লকসিন মিয়ানমার ইস্যুতে পদক্ষেপ নিতে আসিয়ানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুরও সহিংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি দাবি করেছেন।মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশনসের বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো।