আগেই ২টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গেছে। এরইমধ্যে বয়সও ৪১ ছাড়িয়ে বিয়াল্লিশের পথে। স্বাভাবিকভাবে এখন তার অবসরে থাকার কথা। কিন্তু তার নাম যে ক্রিস গেইল। তার তৃষ্ণা কি আর এত সহজে মেটে? এবার ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব জিততে চান আরও একটি বিশ্বকাপ শিরোপা। দীর্ঘদিন পর ক্যারিবীয় দলে ডাক পেয়েছেন গেইল। আর ডাক পেয়ে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ছেড়ে ফিরে গেছেন নিজ দেশে। এমনটা তাকে আগেই খুব কমই করতে দেখা গেছে। আগে বরং ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগে খেলার প্রতি তার আগ্রহ ছিল বেশি। কিন্তু এবার বিষয়টা যেন একটু আলাদা। কারণ এবার তিনি নিজেই জানালেন, জাতীয় দলে খেলার তাড়না এখনও অনুভব করেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন হোম সিরিজে উইন্ডিজের জার্সিতে ফিরছেন গেইল। এর আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমি খেলাটা ছাড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবাই বললো, ‘না ছেড়ো না। যতদিন পর্যন্ত খেলতে পারো খেলে যাও। ’ ফলে আমি খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে জাতীয় দলে ফেরার কথা ভাবিনি। আমি চেয়েছি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে যতদিন মানুষকে আনন্দ দেওয়া যায় এবং গেইলের যা কিছু অবশিষ্ট দেওয়ার আছে, তা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম। “
“যখন আমি (জাতীয় দলের ফেরার) কল পেলাম এবং তারা আমার আগ্রহ আছে কি না জানতে চাইলো, আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চাই। ‘ সেখানেই আমার মন পড়ে থাকে। অন্তত এই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের কোনো প্রস্তাব ফেরাবো না। এজন্য আমি পাকিস্তান ছেড়ে চলে এলাম যাতে বিশ্বকাপের আগে দলে একতাবদ্ধতা তৈরি হয়। আশা করি আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা জিততে পারব। ”
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর গেইলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। শুরুতে ওই বিশ্বকাপ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপের কয়েক মাস পর ফের মাঠে নামেন তিনি। এরপর অবশ্য আবারও লম্বা বিরতি নেন তিনি। তবে দুনিয়াজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা চালিয়ে যান তিনি। এমনকি ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি খেলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন।
শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে খেলা চালিয়ে যেতে নিজের মনের জোর নিয়েও কথা বলেন গেইল, “৪১ বছর বয়স বলেও এটা আমার কাছে এখন শারীরিক নয়, মানসিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এটা মনের জোর। আমার মন এখনও মাঠে যেতে এবং ব্যাট হাতে আনন্দ পেতে চায়। এটাই আমাকে খেলা চালিয়ে যেতে বাড়তি প্রেরণা যোগায়। যদি মন আর না চায়, তখন বড় প্রশ্নটা করব, তার আগ পর্যন্ত এটা মানসিক স্থিতির ব্যাপার। ”
২০১২ ও ২০১৬, এই দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী উইন্ডিজ দলের ৮ সদস্যের একজন গেইল। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নও দেখছেন এই বাঁহাতি, ‘আমি (শ্রীলঙ্কা) সিরিজ জিতে শুরু করতে চাই। কিন্তু আমার মূল লক্ষ্য বিশ্বকাপ জেতা। সামনে কয়েকটি সিরিজ আছে এবং এরপর আরও অনেক খেলা বাকি আছে। এসব সিরিজ থেকে যত বেশি নেওয়া যায় চেষ্টা সেটাই থাকবে। ’
ক্যারিয়ারে অধিকাংশ সময় ওপেনার হিসেবে খেললেও এবার তার পজিশন নেমে যেতে পারে। গত আইপিএলে দুই নম্বরে নেমে দারুণ খেলেছেন তিনি, যা দেখে তাকে দলে ফেরানোর আগ্রহ তৈরি হয় নির্বাচকদের মধ্যে। গেইল জানিয়েছেন, দল তাকে যেখানে খেলাতে চাইবে সেখানেই মানিয়ে নিতে চান তিনি। এমনকি তা যদি পাঁচেও হয়, তাতেও তার আপত্তি নেই।
গেইল বলেন, ‘মনে হয় আমি এখন তিন নম্বরের স্পেশালিষ্ট। (আইপিএলে) আমাকে কোচ অনিল কুম্বলে এই পজিশনে খেলতে বলেছিল। এমনকি আইপিএল শুরুর আগেই সে এটা বলেছিল, যা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি স্পিন ভালো খেলি। আমি ওপেনার হিসেবে যে কারো চেয়ে পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে ভালো খেলি। কিন্তু উইন্ডিজের হয়ে যে কোনো ভূমিকায় আমি খেলতে রাজি। যদি ওপেনিং করতে হয় তাতে কোনো অসুবিধা নেই, এমনকি ৩ বা পাঁচেও আমি মানিয়ে নিতে সক্ষম। সেখানেও আমি বিশ্বের সেরা পাঁচ কিংবা তিন থাকব। ’