ব্যাংকমালিকদের সুবিধা দিতে এক পরিবার থেকে ৪ জন এবং টানা ৯ বছর পরিচালক থাকার সুযোগ দিয়ে আইন সংশোধন হয় ২০১৮ সালে, নির্বাচনের আগে।
ব্যাংকের পরিচালক পদের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িয়ে নিতে নতুন করে তোড়জোড় শুরু করেছেন প্রভাবশালী ব্যাংকমালিকেরা। তাঁরা ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পরিচালক পদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে ১২ বছর করার জন্য প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সরকার পরিচালক পদের মেয়াদ ৬ বছর থেকে ৯ বছর করে। পাশাপাশি একই পরিবার থেকে দুজনের পরিবর্তে চারজনকে পরিচালক করার বিধান যুক্ত করে। ২০১৮ সালে তাঁদের সুবিধা দিতে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়েছিল বলেঅর্থনীতিবিদরা মনে করেন।
সামনে ১২তম সংসদ নির্বাচন
নির্বাচনের আগে ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধনী হচ্ছে। এবারও তাঁরা নানাভাবে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২৩’ সংসদে উপস্থাপন করেন। সাত দিনের মধ্যে এই বিল পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। স্থায়ী কমিটি বিলটি পর্যালোচনা করছে।
ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘আমরা চাই মেয়াদ আরও বাড়ুক। মেয়াদের বিষয়টি উঠিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানি না।আমরা চেয়েছিলাম মেয়াদের বিষয়টি তুলে দেওয়া হোক। শুনেছি সেটা ১২ বছর করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এর আগে গত মার্চে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। গত ৩২ বছরে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়েছে সাতবার। দেখা গেছে, যখনই ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন হয়, তখনই নতুন করে ৯ বছর করে পদে থাকার সুযোগ পান পরিচালকেরা। ফলে এই সুযোগে কোনো কোনো ব্যাংক পরিচালক ও চেয়ারম্যান ২৩ বছর ধরে পদে রয়ে গেছেন। এসব ব্যাংক বেশি খারাপ অবস্থায় পড়েছে। র্দিঘ সময় যারা ব্যাংকের একি পদে রয়েছেন তাদের ব্যাংক গুলোতে সবচেয়ে বেশি র্দুনিতি ও অনিয়ম ঘটেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু পরিচালক ব্যাংকগুলোকে পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলছেন। এসব ব্যাংক পরিচালক খুবই প্রভাবশালী। কয়েকজন ব্যাংক পরিচালক সরকারের মন্ত্রিসভাতেও আছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাংক পরিচালকেরা। এ জন্য ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে খারাপ হয়ে পড়েছে, তা কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখতে বিভিন্ন সময় নানা ফন্দিফিকির করা হচ্ছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই খারাপ অভিঘাত।’তাদের মতে দেশের গোটা অর্থনীতি সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে ব্যাংক মালিকরা।