বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে প্রতিপক্ষের বোমা (ককটেল) হামলায় নিহত মৌজে আলী মৃধার ছেলে এবং ওই হত্যা মামলার বাদী মোঃ নজরুল ইসলাম মৃধা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন তার অগোচরে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার নিজে উদ্যোগী হয়ে বাদীর চাচা বিজয়ী ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী ফিরোজ মৃধাকে তার পিতার হত্যা মামলার ১নম্বর আসামী করেছেন। একই সাথে তিনি মূল হত্যাকারীদের বাদ দিয়ে ভিকটীম পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আসামী করে গ্রেফতারের জন্য হয়রানী করছেন।
গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় গৌরনদী বন্দরস্থ একটি পার্টি অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্যে মোঃ নজরুল ইসলাম মৃধা উল্লেখ করেন, গত সোমবার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ইউপি সদস্য পদে প্রার্থী ছিলেন তার চাচা মোঃ ফিরোজ মৃধা। চাচার সমর্থক হিসেবে তারা যখন ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রদান করছিলেন তখন প্রতিপক্ষ প্রার্থী মোঃ মন্টু হাওলাদার তার নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার সমর্থকদের নিয়ে আমাদের কর্মী সমর্থকদের ওপর বোমাবাজি করে হামলা চালায়। বোমার আঘাতে আমার পিতা মৌজে আলী মৃধা ঘটনাস্থলেই মৃত্যু বরন করেন। পিতার হত্যাকান্ডের বিচার প্রার্থনা করে পুত্র হিসেবে আমি (মোঃ নজরুল ইসলাম মৃধা) গৌরনদী মডেল থানায় গিয়ে ১৬জন আসামীর নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দেই। কিন্তু গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার উল্লেখিত ১৬ জন মূল আসামীর ১৩জনকে বাদ দিয়ে আমার (বাদীর) অগোচরে আমার চাচা বিজয়ী ইউপি সদস্য প্রার্থী মোঃ ফিরোজ মৃধাকে হত্যা মামলার ১নম্বর আসামী করেন। একই সাথে ভিকটীম পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আসামী করে অভিযোগ দায়ের করে ফিরোজ মৃধাকে কোর্টে চালান দেন ও অন্যান্যদের গ্রেফতারের জন্য হয়রানী করছেন। যা সম্পূর্নটাই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। মূলত কি কারনে এবং কেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কাজ করেছেন তা তার বোধগম্য নয়। হত্যাকান্ডে জড়িত মূল আসামীদের বাদ দিয়ে ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের আসামী করে তিনি হত্যার বিচার কার্যকে বিঘ্নিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় মোঃ নজরুল ইসলাম মৃধার পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে বাদী মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর বর হাওলাদারের নির্দেশে ওসি (তদন্ত) মোঃ তৌহিদুজ্জামান সোহাগ আমার দেয়া অভিযোগ পত্রটি পাল্টে ফেলে তাদের তৈরী করে আনা মনগড়া অভিযোগত্রে আমার স্বাক্ষর নেয়। যেটি ঢেকে রাখা হয়েছিল। নিয়ম থাকলেও অভিযোগ পত্রটি আমাকে পাঠ করে শোনানো হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে ওসি (তদন্ত) মোঃ তৌহিদুজ্জামান সোহাগের নম্বরে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার বলেন ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমি আমার অফিসে চলে যাই বাদীর সাথে ওই রাতে আমার দেখাই হয়নি। ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ তৌহিদুজ্জামান সোহাগ ফোনে আমাকে জানিয়েছিলেন নিহতের ছেলে এসেছে অভিযোগ নিয়ে। আমি তাকে বলেছি অভিযোগ নিয়ে এফআইআর করে ফেল। এর বাইরে কোন কথা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনের পরপরই ওই এলাকার তিন শতাধীক নারী পুরুষ মিলে গৌরনদী মডেল থানা ঘেরাও করে গ্রেফতার হওয়া বিজয়ী ইউপি সদস্য প্রার্থী মোঃ ফিরোজ মৃধার অবিলম্বে মুক্তি ও হত্যা মামলার আসামী থেকে মোঃ ফিরোজ মৃধাসহ নিহতের স্বজনদের নাম বাদ দিয়ে মূল হত্যাকারীদেরকে আসামী করে অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবী জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে ঘেরাওকারীরা শান্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন।