চট্টগ্রাম ব্যুরো : ঘরে-বাইরে মশা। মাঠে-ঘাটে মশা। মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ মানুষ। একদিকে বৈশ্বিক মহামারী করোনার জ্বর, অন্যদিকে মশাবাহিত ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ছড়ানোর আতঙ্ক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মসূচি জোরালো না হওয়ায় ক্ষুব্ধ অনেকে। বিষাক্ত মশার কয়েলের ধোঁয়া, ফ্লাইং ইনসেক্ট কিলার স্প্রে আর মশারির ওপরই শেষ ভরসা মানুষের।
নগরের আউটার স্টেডিয়ামের মুক্তমঞ্চ এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় জড়ো হন শত শত তরুণ-তরুণী। কেউ মালাই চায়ের লোভে আসেন, কেউবা মুখরোচক নাশতা, শীতের পিঠা, কাবাব, স্ট্রিট ফুড খেতে আসেন সদলবলে। তাদেরই একজন আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা হুল ফুটাতে থাকে। এত মশা আগে কখনো দেখিনি। ঘরেও মশা, বাইরেও মশা। মশার কাছে জিম্মি সবাই।
আসকার দীঘির পাড়েই বাসা বেসরকারি সংস্থার চাকরিজীবী হুমায়রা সুলতানার। তিনি বলেন, বিকেল, সন্ধ্যা ও ভোরেই মশার উৎপাত বেশি। দরজা, জানালা বন্ধ করে মশার কয়েল জ্বালালে কিছু মশা মেঝেতে পড়ে থাকে। কিছু সময় পর আবার মশার উৎপাত শুরু। স্প্রে দিলে কেয়ারই করে না মশা।
শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ রোডে একটি ভবনের দারোয়ানের চাকরি করেন আবদুল জলিল। তিনি বলেন, একসময় মশা সাইরেন বাজাত, গান শোনাত। এখন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। শরীরের যেখানে কাপড় থাকে না সেখানেই হুল ফুটায়। এত বিষ, সঙ্গে সঙ্গে ফুলে যায়। বাধ্য হয়ে মোটা মোটা মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাত কাবার করি।
শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, মশার কয়েলের ধোঁয়া, স্প্রে এগুলো শিশুদের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি সহ্য করতে না পারলে বড়দের জন্যও ক্ষতিকর। শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শীতকালে অনেক অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় মশার কয়েল থেকেই। মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষা পেতে মশারিই সবচেয়ে নিরাপদ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম বলেন, চসিক ৪১ ওয়ার্ডে নিয়মিত লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ হ্যান্ড স্প্রে মেশিন ও ফগার মেশিনের সাহায্যে দিচ্ছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি থেকে ১৫ হাজার লিটার কালো তেল কেনা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) ২০ ড্রাম ডেলিভারি নিয়েছি। দ্রুত এগুলো ছিটানো হবে। বদ্ধ পানিতে মশা ধ্বংসে এটি কার্যকর ওষুধ।
তিনি জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডকে চার ভাগ করে নিয়মিত মশার ওষুধ স্প্রে করছে প্রশিক্ষিত কর্মীরা। প্রতি ওয়ার্ডে ২টি করে ফগার মেশিন ও পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্প্রে মেশিন দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের নির্দেশে মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। চসিকের পাশাপাশি নগরবাসীকেও এগিয়ে আসতে হবে। ফ্রিজ, এসি, ফুলের টব, নির্মাণাধীন ভবন, ডাবের খোসা, ফেলে রাখা টায়ারসহ কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। স্বচ্ছ পানিতে বংশ বিস্তার করছে এডিস মশা। বাসা বাড়ির ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখতে হবে। সম্ভব হলে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সেপটিক ট্যাংকে ২৫০ মিলিলিটার কেরোসিন তেল সাবধানে ঢেলে দিতে পারেন ভবন মালিকরা।