করোনার সময়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতি গতানুগতিক ধারার বলে জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। ব্যবসায়ী এ সংগঠনটির মতে, সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বের হয়ে আসার প্রতি এবারের মুদ্রানীতিটি বিশেষ নজর দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) তাৎক্ষণিক গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় এসব জানায় ঢাকা চেম্বার।
ডিসিসিআই জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। ২০২২ সাল নাগাদ সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩২.৬ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪.৮ শতাংশ যা কিছুটা আশাবাদী।
করোনার কারণে আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না বিধায় ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি সামগ্রিক অর্থনীতি এবং বেসরকারি খাত ঘুরে দাঁড়াতে না পারে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নাও হতে পারে।
গত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের পেছনে ব্যয় করার জন্য ১.২৮ ট্রিলিয়ন টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। আর এই অর্থ যোগান দিতে সরকারকে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীল হতে পারে আর তাতে করে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। ২০২১ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ছিল ৮.৪ শতাংশ। বিনিয়োগ না হওয়া, দুর্বল অর্থনীতি, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি, বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে ধস বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কম হওয়ার অন্যতম কারণ। প্রায় ৯০ শতাংশ সিএমএসএমই স্বল্প সক্ষমতায় পরিচালিত হচ্ছে এবং নতুন বিনিয়োগেও তেমন আগ্রহী নয়।
ব্যবসায়ী এ সংগঠনটি জানায়, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিনিয়োগের রিটার্ন অথবা সঞ্চয়পত্র, পোস্টাল সেভিংস এবং পেনশনের সেভিংস সার্টিফিকেট প্রভৃতির ক্ষেত্রে প্রদেয় সুদের হার যৌক্তিক হারে ব্যাংকিং ইনস্ট্রুমেন্ট যেমন এফডিআরের ন্যায় ব্যাংক প্রদত্ত সুদের হারের সঙ্গে বা বন্ডের রিটার্নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কিছুটা কমানো যেতে পারে। তবে এ বিষয়ক কোনো নির্দেশনা মুদ্রানীতিতে প্রতীয়মান হয়নি। সিএমএসএমই খাত কে পুনর্জীবিত করতে আর্থিক প্রণোদনাসহ অনেক ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঘোষিত মুদ্রানীতিতে প্রদত্ত সুবিধাদি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তেমন দিক-নির্দেশনা বা রোডম্যাপ দেয়া হয়নি।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের বিষয়টি তেমন উদ্বেগজনক নয়, তবে অনেকক্ষেত্রে টাকার মানের এ হার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত মুদ্রানীতিটি কিছুটা গতানুগতিক ও ধারাবাহিক এবং এ নীতিতে বেসরকারি খাতকে উজ্জীবিত করতে উদ্ভাবনী কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। যদিও, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার সমন্বয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ হতে তাদের কার্যক্রমের নজরদারি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।