জানতে চাইলে বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একসময় ব্যাংকগুলোর মূল ব্যবসা ছিল চট্টগ্রামে। বড় ধাক্কা খাওয়ার পর সবাই শিক্ষা নিয়েছে। ভালো করপোরেট প্রতিষ্ঠান ছাড়া ব্যাংকগুলো এখন চট্টগ্রামের কাউকে ঋণ দিচ্ছে না। এরপরও এত ঋণ বৃদ্ধি পাওয়াটা অস্বাভাবিক।’ পাঁচ–সাতটি ব্যাংকের কারণে ওই অঞ্চলে ঋণ এত বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে চট্টগ্রামে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হলেও কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা তিন গুণ হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে সমস্যা দেখে অধিকাংশ ব্যাংক যখন হাত গুটিয়ে নিয়েছে, তখন অল্প কয়েকটি যেন আগের চেয়েও উদার হস্তে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। যেমন চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের দেওয়া ঋণের পরিমাণ ২০১৬ সালে ছিল ১২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। তা গত বছরের শেষে বেড়ে হয়েছে ৩৭ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৬ সাল–পরবর্তী পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম বিভাগে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৫ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৬ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। একই সময়ে এই ব্যাংকের ঋণ বিতরণ প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে। মালিকানা পরিবর্তন হয়ে এই দুটি ব্যাংক এখন চট্টগ্রামভিত্তিক এক শিল্পগ্রুপের হাতে রয়েছে।
এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ সাতটি ব্যাংকের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো ঋণ দিচ্ছে। কাকে ঋণ দিচ্ছে, কোথায় ঋণ ব্যবহৃত হচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। এ জন্য এই অঞ্চলে ঋণ বাড়ছে। এসব বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কোনো আগ্রহ নেই। বরং তিনি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ও প্রকৃত চিত্র লুকিয়ে রাখতে তৎপর। এর ফলে পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়াবহ হয়ে উঠছে।’
জানা গেছে, ব্যাংক খাতের সর্বোচ্চ ৬৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ ঋণ বিতরণ হয়েছে ঢাকায়। এরপর চট্টগ্রামে ১৮ দশমিক ৫১ শতাংশ, খুলনায় ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ, রংপুরে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ, সিলেটে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ ও বরিশালে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ হয়েছে। ব্যাংক খাতের দেওয়া ঋণের পরিমাণ গত ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছিল ১২ লাখ ১০ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।