চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের ফতেয়াবাদ শাখায় পিওন মামুন মিয়ার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এক নারকীয় ঘটনায় কেঁপে উঠেছে স্থানীয় মহল। প্রতিষ্ঠানের শাখার হিসাবরক্ষক আল আমিনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক বলাৎকার করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ, ভুক্তভোগীর চাকরির নিরাপত্তাহীনতা এবং মীমাংসার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের গুঞ্জনে পুরো ঘটনাটি হয়ে উঠেছে নৈতিকতার লজ্জাজনক উদাহরণ।
মাত্র মাসখানেক আগে পিওন হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মামুন মিয়া। সহজ-সরল এই যুবক প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী সহকর্মীদের সঙ্গে অফিসের একটি আলাদা কক্ষে থাকতেন। তবে তার এই সরলতাকে কাজে লাগিয়ে শুরু থেকেই শাখার হিসাবরক্ষক আল আমিন অসদাচরণের পরিকল্পনা করেন।
প্রথমে মামুনকে রাতে ঘুম থেকে ডেকে শরীর ম্যাসাজ করতে বাধ্য করতেন আল আমিন। এ ধরনের কাজের প্রতিবাদ জানালে আল আমিন তাকে অফিসের টাকা চুরির অভিযোগে ফাঁসানোর হুমকি দেন। ভীত মামুন নিজেকে রক্ষা করতে নীরব থাকলেও এই নীরবতাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে আল আমিন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর রাতেও জোরপূর্বক বলাৎকারের চেষ্টা করায় পার্শ্ববর্তী হাটহাজারী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধে এবং চাকরী হারানোর ভয়ে পুলিশের তদন্তের বিষয়টি স্থগিত করেন মামুন। কর্মকর্তারা তাকে আরো আশ্বস্থ করেন হিসাবরক্ষক আল আমিনের স্ত্রী গ্রামের বাড়ী থেকে আসলে ৫ই ডিসেম্বর ফ্যামিলি বাসা নিয়ে অন্যত্র চলে যাবেন।
মঙ্গলবার (৩রা ডিসেম্বর) রাত ২টার দিকে আল আমিন অসুস্থতার অজুহাতে মামুনকে মাথা ম্যাসাজ করতে ডেকে নেন। কোনো অস্বাভাবিকতা টের না পেয়ে মামুন তার কথায় সাড়া দেন। তবে কিছুক্ষণ পরই আল আমিন জোরপূর্বক বলাৎকার শুরু করেন। অসহায় মামুন তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন এবং চিৎকার শুরু করেন। সহকর্মীরা ঘুম থেকে জেগে বিষয়টি জানতে পারেন। মামুন সঙ্গে সঙ্গে শাখা ব্যবস্থাপক রাজীব সাহাকে ডেকে পুরো ঘটনা জানান।
পরদিন সকালে জোনাল ম্যানেজার, এরিয়া ম্যানেজার সুশীল, এবং প্রধান হিসাবরক্ষক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা দ্রুত ভুক্তভোগী মামুনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দেন। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে কর্মকর্তারা তাদের ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ করতে বাধা দেন। এমনকি সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
গোপন সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগীকে মীরসরাই শাখায় বদলি করার পাশাপাশি অর্থের বিনিময়ে তাকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রথমে মামুন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছিলেন, পরে তিনি নিজেই বিষয়টি চেপে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
প্রতিবেদক ঘটনা সম্পর্কে জানতে চেয়ে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এমন একটি ঘটনা সম্পর্কে তারা অবগত হয়েছেন। ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।