টানা চতুর্থবারের মতো যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন বাশার আল-আসাদ। শনিবার দেশটির সংসদে নতুন মেয়াদে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। ফলে আগামী আরও সাত বছর সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবেন ৫৫ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট। লেবাননের আল-মায়াদিন টেলিভিশন জানায়, শনিবার বাশার আল-আসাদ সংসদে উপস্থিত হলে সবাই তাকে স্বাগত জানান। এরপর সংবিধান মেনে সবার সামনে নতুন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিরিয়ার রাজনীতিবিদ, ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিক, শিল্পীসহ প্রায় ৬শ’ মানুষ।
শপথ শেষে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলেন, যেসব জাতি স্বাধীনতা ও মুক্তির পথ বেছে নিয়েছে তারা কখনো নিজেদের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে ক্লান্ত হয় না। তিনি আরও বলেন, অনেকেই সিরিয়াকে ভেঙে টুকরো টুকরো করতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণ ঐক্যবন্ধ থেকে শত্রুদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করেছে।
চলতি বছরের ২৬ মে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৭৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল। তার মধ্যে ৯৫ দশমিক এক শতাংশ ভোট পেয়েছেন বাশার আল-আসাদ। যদিও এ নির্বাচন নিয়ে বিপুল বিতর্ক রয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি এ নির্বাচনকে কারচুপির নির্বাচন বলেছে। এছাড়া সিরিয়ার বিরোধীদল মে মাসের নির্বাচনকে প্রহসন হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছে।
নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মতে, নির্বাচনে জাতিসংঘের প্রস্তাব মানা হয়নি। ছিল না আন্তর্জাতিক কোন তদারকি ব্যবস্থা। যেসব এলাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল, সেখানেই মানুষ ভোট দিতে পেরেছে। কিন্তু সিরিয়ায় লড়াইয়ের ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে চলে গিয়েছেন, তারা ভোটে অংশ নেননি বা নিতে চাননি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউ-র কর্মকর্তাদের মতে, মাত্র তিনজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পেরেছেন। যেখানে প্রার্থী হতে চেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রায় ৪৮ জন। কিন্তু বেশিরভাগের মনোনয়ন খারিজ করে দেয় আসাদ সরকার।
অবশেষে আসাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে রাখা হয় তারই সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ সালুম আবদুল্লাহকে। প্রতিপক্ষ হিসেবে তা ছিল অনেকটাই প্রতীকী। যদিও এসব সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছেন বাশার আল-আসাদ।
৫৫ বছর বয়সী বাশার আল-আসাদ ২০০০ সাল থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার বাবা হাফিজ আল-আসাদ প্রায় পঁচিশ বছর সিরিয়া শাসন করেছেন। বাবার পর দায়িত্ব নেন বাশার আল-আসাদ।
প্রায় দশ বছর ধরে গৃহযুদ্ধে দিশহারা সিরিয়া। ২০১১ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচীতে সরকারি বাহিনীর রক্তক্ষয়ী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধটি শুরু হয়েছিল।
চলমান এ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় তিন লাখ ৮৮ হাজার মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগণ। এর মধ্যে বিদেশে শরণার্থী শিবিরে আছে প্রায় ৬০ লাখ।
সূত্র: আল জাজিরা