সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য আর মাদকের বিশাল আস্তানা চনপাড়া বস্তিতে অপরাধ রুখতে জিহাদ ঘোষণা করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। গত এক সপ্তাহের টানা অভিযানে তারা অন্তত ৩শ’ মাদকের আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছে। গ্রেফতার করেছে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিকে। আইনের আওতায় এসেছে পাঁচ শতাধিক অপরাধী। বাকিরা দিয়েছেন গাঢাকা। এতে অপরাধের স্বর্গরাজ্য চনপাড়া বস্তি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রমতে, রাজধানীর উপকণ্ঠে রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি সন্ত্রাসী আর মাদক কারবারিদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে পরিচিত। ছোট ছোট ৪০ হাজার খুপড়ি ঘরের মাঝে অন্তত আটশো মাদকের আস্তানা রয়েছে। এছাড়া অস্ত্র ব্যবসা, চুরি-ডাকাতি ও পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই এই বস্তিতে সংগঠিত হয় না। রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে এই বস্তির ৩শ’ খয়ের পার্টি, মলমপার্টি আর ছিনতাইকারী দাবড়ে বেড়ায়। রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের বিশাল নেটওয়ার্ক।
স্থানীয়দের মতে, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যও এসব অপরাধীদের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অপরাধের এই সাম্রাজ্যের আধিপত্য ধরে রাখতে গড়ে উঠেছে এক ডজন বাহিনী। সর্বশেষ বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডে আলোচনায় আসে এই বস্তির নাম। সে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক বস্তির ডন বজলু মেম্বার চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল কারা হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর বজলুর আসনে বসতে বস্তির জয়নাল গ্রুপ, শমসের গ্রুপ, সাহাবুদ্দিন গ্রুপ, শাওনা গ্রুপ, রায়হান গ্রুপ, রবিন গ্রুপ, ইয়াসমীন গ্রুপ ও দাতভাঙ্গা রাব্বি গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ- সেখানে শুরু করে সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার রক্তক্ষয়ী লড়াই। এসব লড়াইয়ে বহু আহত এবং একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১২ জুন চনপাড়া ইউপি সদস্য নির্বাচনে শমসের গ্রুপের প্রধান শমসের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হলে আবারও শুরু হয় সংঘাত। টানা সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর বস্তিতে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। একমাসের জন্য বস্তিতে তারা শুরু করেন বিশেষ অভিযান।
গত ৭ দিনে পুলিশের বিশেষ অভিযানে তারা অন্তত ৩শ’ মাদকের আস্তানা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। গ্যাংস্টাররা দিয়েছেন গাঢাকা। বিভিন্ন ঘটনায় ১৬টি মামলায় আসামি করা হয়েছে অন্তত পাচঁশো সন্ত্রাসী আর মাদক কারবারিকে। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে অপরাধের স্বর্গরাজ্য চনপাড়া বস্তি এখন অনেকটাই শান্ত। সুফল পেতে শুরু করেছে সেখানকার সাধারণ মানুষ। এ কারণে সেখানকার মানুষের প্রসংশায় ভাসছে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল ও রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এএফএম সায়েদ। তাদেরকে চনপাড়ার হিরো হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
চনপাড়ার ফার্নিচার ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান জানান, ‘আগে গ্যাঞ্জাম শুরু হলেই চলতো লুটপাট। মুহূর্তে একটি দোকানের মালামাল লুটে নিতো সন্ত্রাসীরা। বাড়িঘরেও আতঙ্কে দিনরাত কাটতো আমাদের। পুলিশ যেভাবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন এতে আমরা আতঙ্কমুক্ত হতে শুরু করেছি।
চনপাড়ার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে একাধিক মানুষের সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে এ ধরনের অভিমত। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এএফএম সায়েদ জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় এবং গ-সার্কেল মো. আবির হোসেনের নেতৃত্বে আমরা একমাসের জন্য চনপাড়ায় মাদক কারবারি আর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ শুরু করেছি। যেখানেই মাদক কেনাবেচা আর সন্ত্রাসীদের আনাগোনার সংবাদ পাচ্ছি সেখানেই আমরা অভিযান করছি। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে এলাকা ছেড়ে দিয়েছে। আমরা মাদকের আস্তানাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো ভেঙে দিচ্ছি। তাছাড়া গলিতে গলিতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ মাদক ব্যবসায়ী আর সন্ত্রাসী আইনের আওতায় না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।