চার বছর আগে ২৫ আগস্টের এদিনে বাংলাদেশে ঢল নেমেছিল রোহিঙ্গাদের। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছিলেন রোহিঙ্গারা। সেই ঘটনার চার বছরে দীর্ঘ বৈঠক আর আলোচনা হলেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার।
মিয়ানমারে নতুন সরকার গঠন আর করোনা পরিস্থতিতে এখন প্রায় পুরোটাই থেমে আছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন না করতে পেরে ভাসানচরে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে ৬ দফায় ৮ লাখ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিকের তালিকা হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার রোহিঙ্গার নাম যাচাই-বাছাই করেছে। তালিকার আর কোনো অগ্রগতি নেই। এদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনের মধ্যস্ততায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছে। তবে সেই বৈঠকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখনও দেশটি নেয়নি। জানুয়ারিতে বৈঠকের তিন মাসের মাথায় আবার ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করার কথা ছিল। তবে সেই বৈঠকও আর হয়নি। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে না পারলেও দেশে-বিদেশে এ ইস্যুতে সরব রয়েছে সরকার। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও রোহিঙ্গা সংকট তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা সংকট যেন ফোকাসে থাকে, সে বিষয়েও লক্ষ্য রেখেছে সরকার। গত ১৩ জুলাইয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে বিনা ভোটাভুটিতে বাংলাদেশের একটি প্রস্তাবও পাস হয়েছে। এ প্রস্তাব পাসকে মাইলফলক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। কেন না রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ প্রথমবারের মতো সর্ব সম্মতিক্রমে কোনো প্রস্তাব পাস হয়েছে। এর আগে গত ২০ জুন জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উল্লেখ না থাকায় জাতিসংঘে মিয়ানমার বিষয়ে একটি প্রস্তাবে ভোট দানে বিরত ছিল বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গা ঢলের তিন মাসের মাথায় ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সে অনুযায়ী একই বছর ১৯ ডিসেম্বর মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এলে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। এই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
রোহিঙ্গাদের ফেরতের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। তবে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। এছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্র মুখে মুখে মানবাধিকারের কথা বললেও মিয়ানমারের সঙ্গে ঠিকই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ ড. মোমেন।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন রোহিঙ্গারা। এরপর গত চার বছরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এই সময়ে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।