বাজারে ঢুকলেই চোখে পড়ে নানা প্রজাতির চাষের মাছ। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে মাছের অভাব পূরণ করে চলেছে চাষের এসব মাছ। তবে অনেকে আবার চাষের মাছ পছন্দ না করেন না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মূলত চাষের মাছের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে নাগালের মধ্যে রয়েছে বাঙালির অপরিহার্য খাদ্যপণ্য মাছের বাজারদর।আমিষের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি মাছ চাষ ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের যে অব্যাহত সাফল্য অর্জন তাতে বড় অবদান রাখছে এসব চাষের মাছ।
শুরুতে চাষের মাধ্যমে বড় বড় মাছগুলো বেশি উৎপাদন হতো। এর মধ্যে তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, মাগুর, সিলভারকাপ, রুই, কাতলার মতো কার্প জাতীয় মাছগুলোই বেশি ছিল। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে মিঠাপানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে অধিকাংশ চাষের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। পাবদা, গুলশা, ট্যাংরা, মেনি, রাজপুঁটি, শিং, খলিশা, কই, বাটার মতো ছোট মাছগুলোও এখন যেমন চাষ হচ্ছে, তেমনি গুজি আইড়, চিতল, ফলি, বালাচাটা, মহাশোল, বৈড়ালী, ভাগনা, কুচিয়া, কালবাউশ, সরপুঁটি, গনিয়ার মতো মাঝারি ও বড় আকারের মাছও পুকুর, খাল, ডোবা ও ঘেরে চাষ হচ্ছে। ফলে বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশই চাষের মাছ। পাশাপাশি দেশি মাছতো আছেই।
বাজারে চাষের মাছের সরবরাহ যে খুব বেশি তা স্পষ্ট হয় মৎস্য অধিদফতরের তথ্যেও। অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন দেশে যে পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয় তার মধ্যে ৫৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ বাণিজ্যিক চাষের। বাকি ২৮ দশমিক ১৯ শতাংশ মুক্ত জলাশয়ের, যা প্রকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এবং জেলেরা আহরণ করেন। তবে এর বড় অংশই শুধু ইলিশ। এর মধ্যে মুক্ত জলাশয়ের যেসব মাছ ‘দেশি’ বলে বাজারে বিক্রি হয় তার পরিমাণ খুবই নগণ্য। আর বাঁকি মাছের জোগান হয় সমুদ্র থেকে। দেশে এখন ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ মাছ সমুদ্রের।
একটা সময় ছিল যখন মুক্ত জলাশয়ে জেলেরা মাছ ধরতেন। তখন ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ এই প্রবাদ মানুষের মুখে মুখে ছিল। কিন্তু এখন আর আগের মতো খাল-বিল নেই। ফলে চাষের মাছেই ভরসা।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি মাছের আরতে প্রায় ৩০ বছর ধরে মাছ বিক্রি করেন লিয়াকত মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘চাষের মাছ আছে বলেই মুখে মাছ উঠছে। তা না থাকলে মাছও থাকতো না, আমাগো (আমাদের) ব্যবসাও থাকতো না।’
তিনি বলেন, ‘কালে-ভদ্রে এ বাজারে দেশি মাছ আসে। যা আগেই চড়া দামে বিক্রি হয়। এছাড়া দেশি বলে চাষের মাছ বিক্রির প্রবণতাও রয়েছে সবখানেই।’
তারপরও সচেতন ও রসনাবিলাসীরা খাল-বিলের টাটকা ও তাজা দেশি মাছ খুঁজেন। এর সুযোগ নিয়ে মাছের বাজারে চলছে এ ‘দেশি’র প্রতারণা। অর্থাৎ ‘দেশি’ মাছ (প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা) বলে গছিয়ে দেয়া হচ্ছে চাষের মাছ। আর ওইসব ক্রেতাদের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে দামও বেশি রাখা হচ্ছে চাষের মাছের।
কারওয়ান বাজারে গিয়ে আরও দেখা যায়, পাইকারিতে দেশি-বিদেশি, চাষের, নদীর-এসব ধরন নেই। বিক্রেতারা বলছেন, সামুদ্রিক এবং চাষ হয় না এমন কিছু ছোট মাছ ছাড়া বাকি প্রায় সবই চাষের। পাইকারি বাজারে নদীর মাছ খুব একটা আসেও না। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হওয়া মাছগুলোই এখানে বিক্রি করা হয়। সেভাবেই কেনেন খুচরা বিক্রেতারা। অথচ চাষের এই মাছগুলোই খুচরা বাজারে নিয়ে দেশি ও নদীর মাছ বলে দেদারছে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। পাইকারি বাজার থেকে বের হলেই চাষের মাছ হয়ে যায় নদীর মাছ।