করোনাভাইরাসের ঢেউ সামলে নেওয়ার পর চীনে ফের বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংজু শহরে মূলত বাড়ছে ভাইরাসের এই প্রকোপ। গত রোববার সেখানে ১৮ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর ফলে শহরটির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হিড়িক পড়েছে ফ্লাইট বাতিলের।
এছাড়া গুয়াংজু শহরে জারি করা হয়েছে আংশিক লকডাউন। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শহরের বাসিন্দাদের বাড়িতেই থাকতে বলেছে চীনা সরকার। সেইসঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সোমবার এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার (৩০ মে) দেওয়া করোনা বিষয়ক তথ্যে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়- আরও ২৭ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৭ জন চীনের অন্যান্য অঞ্চলের হলেও ২০ জনই দেশটির গুয়াংডং প্রদেশের।
সোমবার গুয়াংডং প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন শনাক্ত এই ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনই গুয়াংজু শহরের। আর বাকি দু’জন ফোশান শহরের বাসিন্দা।
অ্যাভিয়েশন বিষয়ক তথ্য প্রদানকারী সংস্থা ভ্যারিফ্লাইট জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত গুয়াংজু বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৫১৯টি ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়েছে। যা সোমবারের মোট ফ্লাইটের ৩৭ শতাংশ।
রয়টার্স জানিয়েছে, করোনা মহামারির মধ্যেও গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর ছিল গুয়াংজু বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ২০২০ সালে ৪ কোটি ৩৮ লাখ যাত্রী বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে যাতায়াত করেন।
এদিকে রোববার রাতে গুয়াংজু শহর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, বিমানবন্দর, রেল স্টেশন ও শাটল বাসের মাধ্যমে শহর ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভ্রমণে ইচ্ছুক সকল যাত্রীদেরই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করা করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষায় নেগেটিভ সনদ থাকতে হবে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত ২১ মে থেকে নতুন করোনা রোগী শনাক্তের পাশাপাশি খোঁজ পাওয়া গেছে উপসর্গহীন কোভিড-১৯ রোগীর। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গুয়াংজু শহরের নির্দিষ্ট পাঁচটি সড়কের সকল বাজার, স্কুল ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শহরের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ করোনা শনাক্তকরণে গণপরীক্ষা অভিযান শুরু করেছে। করোনা প্রথমবার শহরে ছড়িয়ে পড়ার অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এবার সংক্রমণ রুখতে এভাবে তৎপর হয়ে উঠেছে প্রশাসন।
লিওয়ান জেলায় বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বেরোনোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাবার সামগ্রী ক্রয় ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো যাবে না।
গুয়াংজু হংকংয়ের উত্তরে অবস্থিত চীনের একটি ব্যবসায়িক ও শিল্প কেন্দ্র। শহরটিতে প্রায় দেড় কোটি লোক বসবাস করেন। নতুন করে এখানে খুব অল্প পরিমাণ মানুষের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলেও কোনো ঝুঁকি নিতে নারাজ স্থানীয় প্রশাসন।
চীন অবশ্য আগেই করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু ফের নতুন করে কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ায় শুরুতেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পথে হেঁটেছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।