1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন

চোরাই অটোরিকশা ‘বাণিজ্য’ করে ডুপ্লেক্স বাড়ি

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২১

শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো সনদ নেই শাহ আলমের (৫২)। কোনোরকম সই-স্বাক্ষর করতে পারেন। গ্রামের বাড়িতে তিনি ‘রনি চোর’ নামেই বেশি পরিচিত। চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চোরাই সিএনজি অটোরিকশা ঢাকায় এনে ভুয়া নম্বর প্লেট বানিয়ে বিক্রি করাই তার পেশা।

আর এ পেশার ওপর ভর করেই তিনি গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ার সানন্দকান্দায় বানিয়েছেন আলিশান আধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়ি। ব্যাংকে আছে মোটা অঙ্কের টাকা।

জানুয়ারিতেই বিষয়টি নজরে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তখনই তার সিএনজির অটোরিকশা গোডাউনে হানা দেয় ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। এরপর থেকেই তিনি লাপাত্তা। অবশেষ নানা কৌশল অবলম্বন করে বৃহস্পতিবার তাকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।

শাহ আলমের প্রতারণার শিকার এক মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীর কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখায় যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। জানা গেছে, চুরি বিদ্যায় সুচতুর শাহ আলমকে ধরতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে হয় পুলিশকে। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আব্বাস উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল চিকিৎসক এবং নার্স সেজে করোনাভাইরাসের টিকাদানসংক্রান্ত সমীক্ষা চালানোর ফন্দি করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তাকে একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত।

সূত্র জানায়, রাজধানীর দোলাইরপাড়ের খালপাড়ে শাহ আলমের চোরাই সিএনজি অটোরিকশার গোডাউন আছে। ঢাকার বাইরে থেকে চুরি করে আনা অটোরিকশাগুলো সেখানে রাখা হয়।

পরে বিআরটিএর এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন করা হয়। বেশিরভাগ রেজিস্ট্রেশনই ভুয়া। কখনো কখনো নামি-দামি ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের নামে এসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেখানো হয়। রেজিস্ট্রেশনে নামি-দামি ব্যক্তির নাম থাকলে পুলিশ সাধারণত বিস্তারিত খতিয়ে দেখে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই অপকর্মের বিস্তার ঘটাচ্ছিল শাহ আলম।

কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা আলী নূরানীর স্ত্রী ইসরাত জাহানের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমাদের বাসা কদমতলী থানার পূর্ব দোলাইরপাড়ে। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি আমি কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা ক্রয় করি। এসব সিএনজি অটোরিকশা দেখাশোনার জন্য শাহ আলমকে ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ দেই। ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করায় তার প্রতি আমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায়। একপর্যায়ে সে আমাদের আরও সিএনজি অটোরিকশা কিনতে উৎসাহ দেয়। প্রতিটি পুরাতন গাড়ি কিনে দিতে সে আমার কাছে ৫-৬ লাখ করে টাকা দাবি করে। সে অনুযায়ী ১৫টি গাড়ি কিনতে তাকে ৮০ লাখ টাকা দিই। গাড়িগুলো কিনে সে তার গ্যারেজে (মূলত চোরাই গাড়ির গোডাইন) রেখেছে বলে আমাকে জানায়। সে আমাকে নিয়মিত ভাড়াও দিয়ে আসছিল। এরই মধ্যে ১০টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের জন্য সে আমার কাছ থেকে আরও ১০ লাখ টাকা ও গাড়ির কাগজপত্র নেয়। ২-৩ মাসের মধ্যে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। নির্ধারিত সময়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করে দিতে না পারায় আমি তার কাছে গাড়ির কাগজ এবং টাকা ফেরত চাই। সে টালবাহানা শুরু করলে আমি তার কাছে আমার গাড়িগুলো দেখতে চাই। সে আমাকে তার গ্যারেজে নিয়ে ১৫টি গাড়ি দেখায়। পরে জানতে পারি, ওই গাড়িগুলো আমার নয়। ওইগুলো মূলত চোরাই গাড়ি। এরপর থেকেই সে লাপাত্তা।

ইসরাত জাহান জানান, ৩০ মে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করি। ওই মামলায়ই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

কথা হয় ইসরাত জাহানের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ড. আলী আক্কাছ নূরানীর সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমার নামে ভুয়া কাগজপত্র করে সড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালাচ্ছিল শাহ আলম ও তার সহযোগীরা। আমি যেহেতু একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারী। তাই কাগজপত্রে আমার নাম থাকলে পুলিশ খুব একটা অসুবিধা করে না। এই সুযোগকেই সে কাজে লাগিয়েছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ১০-১২ দিন আগে একটি মামলার তদন্তের অংশ হিসাবে সিআইডি আমাকে ডাকে। সেখানে যাওয়ার পর জানলাম, শাহ আলম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে চোরাই সিএনজি অটোরিকশাসংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত করছে সংস্থাটি। সেখানে চোরাই গাড়ির কাগজপত্রে আমার নাম আছে। পরে আমি সিআইডিকে জানাই যেসব চোরাই গাড়ির কাগজপত্রে আমার নাম আছে সেগুলো আমার গাড়ি নয়। আমার অগোচরে আমার ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয়েছে। আমার যে স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে তা জাল।

জানতে চাইলে সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মহসীন উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, চোরাই সিএনজি অটোরিকশা ক্রয়-বিক্রয় চক্রের অন্যতম হোতা হলো শাহ আলম। জানুয়ারিতে তার গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ১১টি চোরাই সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার করেছি। এরপর থেকেই তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ পরিদর্শক মহসীন জানান, আমাদের মামলায়ও তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে।

যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আব্বাস উদ্দিন বলেন, শাহ আলম লেখাপড়া না জানলেও সে ধূর্ত প্রকৃতির লোক। চোরাই সিএনজি অটোরিকশার ব্যবসা করে সে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। নিজ গ্রামের মানুষ তাকে চোর হিসাবে জানলেও ঢাকায় বেশ কয়েকজন অ্যাডভোকেটের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক আছে। সে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পক্ষে এক শ্রেণির অ্যাডভোকেট দাঁড়িয়ে যান।

তিনি বলেন, আমরা আসামির রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে জেলগেটে একদিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। শিগগিরই তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গাড়ি চুরি এবং টাকা আত্মসাতের বিষয়ে অধিকতর তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালানো হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি