পোশাক শিল্প একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করে বর্তমানে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরাস্থ বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সরকার ও সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, সরকার, মালিক, শ্রমিক, সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলের সহযোগিতায় বিজিএমইএ বোর্ড বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পোশাক কারখানাগুলোতে আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় বিজিএমইএ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দেওয়া হয় ও বিজিএমইএ বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। বিজিএমইএ এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগস্ট মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।
বিজিএমইএ বোর্ডের নেতৃবৃন্দ বলেন, বিজিএমইএ এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে পোশাক শিল্প কারখানাগুলোর জন্য BNBC-2006 এর আলোকে Steel Structural ভবনের এর জন্য Fire Resistance Rating প্রদানের বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রেতারাও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর আস্থা রাখছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএ বোর্ডের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারের নির্দেশনায় পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী গঠন হয়েছে এবং যৌথবাহিনী গার্মেন্টস অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিতভাবে টহল পরিচালনা করেছে। বিজিএমইএ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছে।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘শ্রম অসন্তোষে আশুলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের সক্ষমতা ছিল না। বিজিএমইএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে ৩৯টি পোশাক কারখানাকে সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’
শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে এবং শিল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিজিএমইএ নিম্নোক্ত কিছু বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে-
শিল্পে সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা;
কাস্টমস বন্দর সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো সহজতর ও দ্রুততর করা;
চট্টগ্রাম বন্দরে পূর্ণ লোডিং ও আনলোডিংয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপন বন্ধ করা;
এই ক্রান্তিকালে পরবর্তী ৩ মাসের জন্য কারখানার ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা;
ব্যাংকখাতের সংস্কার যেন উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব না রাখে;
কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়;
শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করতে যথাযথ নীতি সহায়তা প্রনয়ণের বিষয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা;
শিল্পে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণসহ একটি টেকসই বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করা;
সকল ধরনের ঋণের বিপরীতে ঋণ শ্রেণীকরন না করা এবং ঋণ পরিশোধে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-৪৪ তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২৪ এর ন্যায় পুনঃতফসিলকরণের সুযোগ প্রদান করা;
তৈরি পোশাক কারখানাসমূহের স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে সিএনজি স্টেশন হতে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের নিমিত্তে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা;
ঝুটসহ অন্যান্য রিসাইকেলিং উপযোগী বর্জ্য অপসারণকে বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখা;
পোশাকখাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রণোদনা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা;
পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নিরাপদ এক্সিট পলিসি’র ব্যবস্থা করা;
শিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনা।