কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে সম্প্রতি জনতা ব্যাংক থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি শিল্প গ্রুপকে ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এই ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। হিসাব অনুযায়ী, এর মাধ্যমে তারা কেবল একটি গ্রুপকেই ব্যাংকের মূলধনের ৯৪৯.৭৮ শতাংশ ঋণ সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু কোনো একক গ্রাহককে মূলধনের ২৫ শতাংশের (ফান্ডেড ও ননফান্ডেড) বেশি ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই। একাধিকবার গ্রুপের সার্বিক তথ্য চেয়ে চিঠি দিলেও তা পরিপালন করেনি জনতা ব্যাংক। বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তথ্য গোপন করেছে ব্যাংকটি। এরপর নতুন করে আরও ৪৭৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ঋণের আবেদন করেছে বেক্সিমকো। এর সূত্র ধরে বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। কেননা এত বড় সিদ্ধান্ত ব্যাংকের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে জনতা ব্যাংক।বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ জুলাই জনতা ব্যাংকের ৭৭৮তম পর্ষদ সভায় বেক্সিমকো গ্রুপের ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এই সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কোনো গ্রাহককে বিশেষভাবে একক গ্রাহক ঋণসীমা এবং ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতির বিধান রয়েছে। প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলেও জনতা ব্যাংককে এই ঋণের বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরিদর্শন প্রতিবেদনে এ বিষয়ে দেশের রপ্তানি খাতে বেক্সিমকো গ্রুপের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়- বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট নিরসনে অবদান রাখছে। এ ছাড়া এই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। এই সার্বিক বিবেচনায় ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে উল্লিখিত গ্রাহকদের হিসাবে রপ্তানি ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য জনতা ব্যাংক লিমিটেড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউতে (সমঝোতা স্মারক) একক গ্রাহক ঋণসীমা সংক্রান্ত উপধারা ৪(১) ও (২) থেকে অব্যাহতি প্রদানের ক্ষেত্রে অনাপত্তি প্রদান করা সমীচীন হবে মর্মে প্রতীয়মান হয়। বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতফসিল ও একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রমের দায় থেকে জনতা ব্যাংককে মুক্তি দিলেও দুটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
১. ব্যাংকে গ্রাহকের মোট ঋণের পরিমাণ আর বাড়ানো যাবে না।
২. ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রাহকের ঋণসুবিধা ২৫ শতাংশ সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।