আশফাকুর রহমান রাসেল: দেশের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে প্রথমত দায়িত্ব পালন করার কথা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের। কিন্তু উপজেলা থেকে অধিদপ্তর পর্যন্ত সকল স্তরে জনবলের ব্যাপক সংকট থাকায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না তারা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। বর্তমানে পিআইও সংকটে ভুগছে দেশের প্রায় শতাধিক উপজেলা। এছাড়াও পিআইও সহ মাত্র দুই-তিনজন জনবল নিয়ে পুরো উপজেলার দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয় তাদের। যা একেবারেই অপর্যাপ্ত ও অসম্ভব প্রায়।
আমলাতান্ত্রিক ও আইনি জটিলতার রসানলে দিনদিন সংকুচিত হয়ে পড়েছে পিআইও অফিসগুলো। সেই সুযোগে বাড়ছে কর্মকর্তাদের অনিয়ম। অথচ উপজেলার সকল দুর্যোগ ও মাঠপর্যায়ের অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে থাকে এ অফিসের মাধ্যমেই।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে অনুমোদিত ৫০৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪শো’র মতো পিআইও। এদের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পে বিভিন্ন পদে কাজ করছেন কিছু সংখ্যক পিআইও। অথচ অনেক উপজেলায় পিআইও’র অভাবে সরকারি উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে ’দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২’ প্রজ্ঞাপন জারি হয়। নভেম্বরে অনুমোদন হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় ’দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’ (ডি.ডি.এম)।
দুর্যোগ মোকাবেলা বিষয়ক কার্যক্রমকে সমন্বিত, লক্ষ্যভিত্তিক ও শক্তিশালী করা এবং সকল ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তুলার উদ্দেশ্যেই এ আইনটি প্রনয়ণ করা হয়। কিন্তু বিগত ১২ বছরেও তা যৎসামান্য বাস্তবায়ন হওয়ায় এখনো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আভ্যন্তরীণ কাঠামো খুবই দুর্বল। দিনদিন কার্যপরিধি বিস্তৃত হলেও অধিদপ্তরের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। প্রায় সকল উপজেলা ও জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনবলের ব্যপক সংকট। এজন্য ভয়াবহ দুর্যোগ মুহুর্তেও সরকারের সহায়তা গুলো জনসাধারণের কাছে পৌছুতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রতিটি উপজেলায় একজন পিআইও সাধারণত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ, গ্রামীণ সড়কে ছোট বড় সাইজের কালভার্ট ও সেতু নির্মাণ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা), কাজের বিনিময়ে টাকা কর্মসূচি (কাবিটা), টেস্ট রিলিফ (টি আর), ইজিপিপি (৪০ দিনের কর্মসূচি), মানবিক সহায়তা কর্মসূচি, ত্রাণ সহায়তা এবং ভিজিএফসহ সরকারের নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকেন।
এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের জন্য মাঠপর্যায়ের যে অফিস উপজেলায় অবস্থিত সেখানে সাধারণত একজন প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার ও একজন অফিস সহকারী থাকেন। উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের এক অংশে অবস্থিত প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের কার্যালয়ে প্রতি বছর প্রায় ৫০ কোটি টাকার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয় মাত্র দুই বা তিন জন মানুষের মাধ্যমে। প্রতি উপজেলায় একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর পদ থাকলেও তা অধিকাংশ উপজেলায় শুন্য আছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১০টি পদ থাকলেও অধিকাংশ অফিসে ৪ থেকে ৫ জন লোক কর্মরত আছেন। অথচ ’দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২’ এর ধারা ১১ অনুযায়ী- “অধিদপ্তরের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে এবং তাহাদের চাকুরির শর্তাবলী বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।”
সংশ্লিষ্টদের মতে, আমলাতান্ত্রিক ও আইনি সকল জটিলতা নিরসন করে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের কার্যালয়ের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা রক্ষার্থে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২’ বাস্তবায়ন করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ দেয়া অত্যন্ত জরুরি।