বিশেষ প্রতিনিধি গাইবান্ধা :
সরকারি হাসপাতাল কার্যালয়ে অবস্থিত ৫২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত গাইবান্ধার একমাত্র সরকারি ‘বক্ষব্যাধী চিকিৎসাকেন্দ্রটি এখন প্রায় মৃত। প্রয়োজনীয় জনবল, সরঞ্জামাদি ও রোগী সংকট। প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল ক্লিনিক ষ্টাফ। ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে রয়েছে ১১ জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট, সহকারী নার্স, ফার্মাসিষ্ট, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, অফিস সহায়ক সহ ৬টি পদ শূন্য থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে যক্ষারোগ চিকিৎসাকেন্দ্র (বক্ষব্যাধী) ক্লিনিক কার্যক্রম।
যদিও কাগজপত্রে ‘বক্ষব্যাধী ক্লিনিক’ কিন্তু ভবনের গায়ে লেখা আছে ‘ যক্ষ্মারোগ চিকিৎসাগার’। অথচ যক্ষ্মার কোন চিকিৎসাই নেই এখানে। নজরে সেই পুরানো প্রবাদটি নজরে এসে যায় ” যক্ষার কোন রক্ষা নেই”। কিন্তু প্রবাদটি,র ফলাফল এখনও কি তাই! না। এই ডিজিটাল যুগে অনেক আগেই উধাও হয়েছে এই প্রবাদটির কার্যক্রম। এখন দেশের সব হাসপাতাল গুলোতেই যক্ষার উন্নত চিকিৎসায় এবং সেবায় যক্ষা রোগ থেকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরছে মানুষ। শুধু গাইবান্ধায় এর ব্যাতিক্রম। কিন্তু কেন এই অবস্থা? সরেজমিনে গাইবান্ধাবাসীর সাথে সাক্ষাতে ওই কেন প্রশ্নটির উত্তর রয়ে যায়। আজ অবধি এই প্রশ্নের উত্তরের কোন রাস্তার সমাধানি মিলছে না। শুধু দায়সারার অজুহাতে ব্র্যাক নামের এনজিওর কাছে পাঠানোই যেন তাদের একমাত্র কাজ। রোগীদের কোন চিকিৎসা হয় না এখানে। তাই দিনে দিনে রোগীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এই ক্লিনিক থেকে। ফলে সেখানে অলস সময় কাটাচ্ছেন ডাক্তার, কর্মচারী সবাই। ১৭ বছর ধরে এক্সরে মেশিনটিও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে এই ক্লিনিকে।
বক্ষব্যাধী ক্লিনিক সূত্রে জানা গেছে, এখানে জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং মেডিকেল অফিসার পদে দুজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ২০১৬ সাল থেকে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদটি শূন্য। এছাড়া দুজন গৃহ পরিদর্শিকার পদও দীর্ঘদিন থেকে ফাঁকা পড়ে আছে। এর পাশাপাশি সহকারি নার্স, ড্রাইভারসহ ছয়টি পদফাঁকা আছে লম্বা সময় ধরে।
“বক্ষব্যাধী ক্লিনিকের অফিস সহকারি সাইফুল ইসলাম” জানান, এই ক্লিনিকে এখন রোগীর তেমন উপস্থিতি নেই। প্রতি মাসে গড়ে ৬০ জন রোগ শনাক্ত করতে আসেন। তার মধ্যে ১৫ জনের ধরা পড়ে যক্ষ্মা। রোগীদের ওষুধ এখান থেকে দেয়া হলেও বর্তমানে তা বন্ধ আছে। যক্ষ্মারোগ শনাক্ত এবং রোগীদের ওষুধ বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাওয়ানোর কাজ ব্র্যাক নামের এনজিও ভালোভাবে করায় রোগীরা সেখানেই বেশি ভীড় করছে বলে তাদের ধারণা। কফ পরীক্ষা করে যক্ষ্মা শনাক্ত করা সম্ভব না হলে এক্স-রে করানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু ২০০৩ সাল থেকে এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে এখানে। সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকতেও যক্ষ্মার চিকিৎসার জন্য এনজিও নির্ভরতা দু:খজনক।
“ক্লিনিকের জুনিয়র কনসালটেন্ট পদের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হুদা” বলেন, আমরা রোগ শনাক্ত করে রোগীদের ওষুধ খাওয়ানো সহ ইত্যাদির বিভিন্ন দায়িত্ব ব্র্যাকের কাছে পাঠানোর সমন্বয়ের মাধ্যমে পালন করে থাকি। সরকার থেকেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।