‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি প্রস্তাব গতকাল বুধবার রাতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবটি যৌথভাবে উত্থাপন করে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
এবারের প্রস্তাবে ১১৪টি দেশ সহপৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উঠে এসেছে এ বছরের প্রস্তাবে।
১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদারতা এবং মানবিক সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে এতে। ভাসানচর প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
গৃহীত প্রস্তাবে মিয়ানমারের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাসংকটের মূল কারণগুলো উদঘাটন এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনে রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান রয়েছে ওই প্রস্তাবে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জানায়, প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদের সদস্যদের মিয়ানমারে সব ধরনের সহিংসতার অবসানের দাবি জানাতে বলা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যের দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি এবং আন্তজার্তিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলির তদন্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সর্বোপরি, এবারের প্রস্তাবে ‘রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বার্ডেন শেয়ারিং’ (দায় ও বোঝা ভাগাভাগি) নীতির আওতায় জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো যাতে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখে সে বিষয়ে জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পর জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। আমাদের ভূখণ্ডে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কোনো সুযোগ নেই। তাদের অবশ্যই নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।’
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি। বক্তব্যে তিনি আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন জানায়, চলমান বিভিন্ন বৈশ্বিক সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবটিতে জাতিসংঘের অসংখ্য সদস্য রাষ্ট্রের সহপৃষ্ঠপোষকতা এক অনন্য সফলতার ইঙ্গিত বহন করে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় এটি বিশ্বব্যাপী সংহতির একটি জোরালো বার্তা।