জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড . হারুন – অর – রশিদের দুই মেয়াদ অর্থাৎ টানা ৮ বছর দায়িত্ব পালন উপলক্ষ্যে গতকাল পহেলা মার্চ সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসে সিনেট হলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়ােজন করা হয়েছে । উক্ত সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় উপাচার্য গত ৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অর্জন , উন্নয়ন – অগ্রগতি বিশদভাবে তুলে ধরেন।
তিনি প্রথমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুক রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান
তিনি বলেন আপনারা জানেন , ২০১৩ সালের ৬ই মার্চ সর্বপ্রথম আমি জাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশক্রমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় চ্যান্সেলর জনাব মাে . আবদুল হামিদ কর্তৃক নিয়ােগ লাভ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যােগদান করি । ৪ বছরের প্রথম টার্ম শেষ হলে ধারাবাহিকভাবে আমি দ্বিতীয় টার্মের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে পুন নিয়ােগ লাভ করি । দ্বিতীয় টার্মেরও একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছেছি । আজ থেকে ৩ দিন পর অর্থাৎ ৪ঠা মার্চ আমার শেষ কর্ম – দিবস ।
জীবনের শ্রেষ্ঠ ৮ টি বছর এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়েছি । জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বে কী অধ্যায় ছিল আর বর্তমানে কোথায় এসে পৌছেছে , তা আপনাদের চেয়ে ভালাে আর কেউ জানে না ( বিস্তারিত ২৭ শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ অনুষ্ঠিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে আমার অভিভাষণ দ্রষ্টব্য ) । কতদূর অর্জন বা উন্নয়ন সাধনে সক্ষম হয়েছি – না – হয়েছি তা ভবিষ্যৎ বলবে । তবে সে ক্ষেত্রে সততা , নিষ্ঠা আর ঐকান্তিকতার সঙ্গে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া কোনাে কমতি ছিল না । আমার সময়ে সিনেটে ১৫ টি ( গড়ে বছরে প্রায় ২ টি ) , সিন্ডিকেটের ৮০টি ( গড়ে মাসে প্রায় ১ টি ) , একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫ টি , এফ সি ( ফিন্যান্স কমিটি ) -র ৫৮ টি , পকিল্পনা ও উন্নয়ন কটির ১৬ টি , বোের্ড অব এডভান্স স্টাডিজ – এর ১২ টি এবং অধিভুক্তি কমিটির ২৬ টি সভা অনুষ্ঠিত হয় । একই সময়ে ৫৭৩ জন নতুন শিক্ষক কর্মকর্তা – কর্মচারী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়াসহ যথারীতি ও বিধান অনুসরণপূর্বক নিয়ােগ লাভ করেন । এই সময়ে ২৪৬ টি স্নাতক ( পাস ) , ৪৩ টি স্নাতক ( সম্মান ) , ৪০ টি মাস্টার্স ১ ম পর্ব , ৮২ টি মাস্টার্স শেষ পর্ব এবং ৫৪ টি প্রফেশনাল কলেজ প্রতিষ্ঠান অধিভুক্তি লাভ করে । এছাড়াও উল্লেখিত সময়ে ৩৪ জনকে এমফিল ও ২৫ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয় ।
জাতীয় বিশ্ববি’লয়ের দুটো প্রধান সমস্যা বা সংকটের একটি ছিল দুর্বিষহ সেশনজট এবং দ্বিতীয়টি ইমেজ সংকট ছাড়া সীমিত অবকাঠামাে , মান্দতা আমলে পরিচালন ব্যবস্থা ও শ্রেয় নীতিমালা নিরসনে অভাবজনিত সমস্যাও ছিল । আমরা “ ক্রাশ প্রোগ্রাম নামে একটি বিশেষ একাডেমিক ক্যালেন্ডার উদ্ভাবন করে তা কার্যকর করার মাধ্যমে দুই বছরের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষ ও কোসের লক্ষ – লক্ষ শিক্ষার্থীকে সেশনজটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে সমর্থ হই । পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মাত্র ৩ মাসের মধ্যে লােভল / প্রকাশ বাধ্যতামূলক করি- যেখানে ফল প্রকাশের পূর্বে ৮-৯ মাস লেগে যেতাে ।
সারা দেশে ২২টি কলেজে ডিজিটাল স্টুডিও নির্মানে প্রত্যেক কলেজে ৪লাখ করে আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকি। বর্তমানে প্রত্যেকটি এক একর ভূমির উপর তিনটি নিজস্ব স্থায়ী আঞ্চলিক কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। সারাদেশে অঞ্চলভিত্তিক আরো ৬টি স্থায়ী আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। ক্যাম্পাসে পূর্বে কারো জন্য কোন আবাসনের ব্যবস্থা ছিল না। এখন ১০তলা বিল্ডিং সহ ৬তলা বিশিষ্ট ভবন (একটি কর্মকর্তা ও একটি জরুরী সার্ভিসে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য) সহ পাঁচটি ভবন নির্মিত হচ্ছে। প্রথম দুটি ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিচালন পদ্ধতি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ ছাড়াও নতুন নতুন একাডেমিক প্রবর্তন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কলেজসমূহ প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী ও টেকনিক্যাল বিষয় শর্ট কোর্স ডিপ্লোমা চালুর আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ২০১৭ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের চ্যান্সেলর জনাব মোঃ আব্দুল হামিদ এর উপস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে করতে সক্ষম হই।
বিগত দিনে আপনারা আমার প্রতি, জাতীয় বিশ্ব-বিদ্যালয়ের প্রতি যে সমর্থন সহযোগিতা প্রদান করেছেন আশা করি ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। আপনাদের প্রতি থাকলো প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকবেন। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক কেউ যেন দুঃখ কষ্ট না পায়। আর আমরা সবাই যেন সৎপথে ন্যায়ের পথে চলি। আপনাদের সবার কল্যাণ হোক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর আরো উন্নতি সমৃদ্ধি সুনাম ঘটুক। সকলকে ধন্যবাদ।