আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ট্রিয়ারে ফুটপাতে উঠে পড়া একটি দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় নয় মাস বয়সী একটি মেয়েশিশুসহ পাঁচ পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবারের এ ঘটনায় আরও ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে বলে সন্দেহ কর্তৃপক্ষের। প্র্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ব্যস্ত বিপণিবিতান এলাকার ফুটপাতে উঠে পড়া দ্রুতগামী গাড়িটির ধাক্কায় বেশ কয়েকজন ছিটকে যান, লোকজন আতঙ্কে ছুটাছুটি ও চিৎকার শুরু করে।
আমরা এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছি, একটি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে, বলেছে পুলিশ।
তারা জানিয়েছে, ঘটনা ঘটার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ট্রিয়ারের বাসিন্দা ৫১ বছর বয়সী এক জার্মানকে আটক করা হয়, এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কৌঁসুলি পিটার ফ্রিটজেন জানান, সন্দেহভাজন প্রচুর মদ্যপান করেছিল আর এই ঘটনায় ইসলামিক কোনো ইন্ধন ছিল, কর্তৃপক্ষ এমন অনুমানের ভিত্তিতে কাজ করছে না।
ট্রিয়ারের মেয়র ওয়েফ্রাম লাইব বলেছেন, আমরা সম্ভবত একজন মানসিক সমস্যাগ্রস্ত সন্দেহভাজনকে নিয়ে কথা বলছি, তবে আগাম কিছু বলা ঠিক হবে না। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সন্দেহভাজনকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে কিনা তা নির্ধারণ করতে তার মানসিক স্বাস্থ্যের আরও বিস্তৃত পরীক্ষানিরীক্ষা করা দরকার। ট্রিয়ার পুলিশের উপপ্রধান ফ্রান্স ডিটা আনকেনা জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন গত কয়েক রাত তার গাড়িতেই কাটিয়েছেন আর তার কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই বলে মনে হচ্ছে। গাড়িটি তার নয়, অন্য কারও কাছ থেকে ধার করা; কারণ সেটির রেজিস্ট্রেশন অন্য আরেকজনের নামে। পুলিশের খাতায় সন্দেভাজনের নামে কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি, বলেছেন তিনি। নিহতদের মধ্যে নয় মাস বয়সী একটি শিশু আছে বলে জানিয়েছেন মেয়র লাইব। রিনেল্যান্ড-প্যালাটিনাটে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রচা লিভেন্স জানিয়েছেন, ২৫ ও ৭৩ বছর বয়সী দুই জন নারী ও ৪৫ বছর বয়সী একজন পুরুষও নিহত হয়েছেন, তারা সবাই ট্রিয়ারের বাসিন্দা। পরে পুলিশ আরও এক ব্যক্তিও নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে। ইনি ৫২ বছর বয়সী একজন নারী বলে জানিয়েছে জার্মানির গণমাধ্যম। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা সঙ্কটজনক বলেও জানিয়েছে তারা।
এই ঘটনায় জার্মানির সবচেয়ে প্রাচীন শহর ট্রিয়ারের বাসিন্দারা হতভম্ব ও মর্মাহত হয়েছেন। দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে রোমানরা এই নগরীটির পত্তন ঘটিয়েছিল। শহরের বাসিন্দাদের ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। সাধারণত প্রতিবছর এই স্থানটিতে নগরীর ক্রিসমাস মার্কেট বসে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এ বছর সেখানে ক্রিসমাস মার্কেট বসেনি। ২০১৬ সালে বার্লিনের ক্রিসমাস মার্কেটে ট্রাক হামলা চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা ও বহু লোককে আহত করার ঘটনার পর থেকে জার্মানিজুড়ে হাঁটাপথগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল।