নিজস্ব প্রতিবেদক : গতকাল কিশোরগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবা সচিব মো. আবদুল মান্নানের উপর হামলা হয়েছে। একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সৃষ্ট ঘটনার মুখোমুখি সচিব এবং এমপি। মো. আবদুল মান্নান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব। ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। অন্যদিকে নূর মোহাম্মদ সাবেক আইজিপি। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ছাত্রজীবনে তিনি জাসদের রাজনীতি করতেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, ছাত্র রাজনীতি থেকেই কিশোরগঞ্জের এই দুই বাসিন্দার মধ্যে তুমুল বিরোধ ছিল এবং এই বিরোধ এখনো চলমান রয়েছে। জাসদ এবং বাসদের বিরোধ এখন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে এসে চেপেছে। নূর মোহাম্মদ ছাত্রজীবনে জাসদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জাসদের রাজনীতি করলেও তিনি পুলিশ সার্ভিসে যোগদেন এবং পুলিশ বাহিনীতে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে পুলিশের আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করেন। নূর মোহাম্মদ ওয়ান ইলেভেনের সময় পুলিশের আইজি ছিলেন এবং সেই সময় তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু তারপরও বিডিআর বিদ্রোহের সময় তার মেয়ের জামাই নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পান। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, নূর মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের সময় যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। সেই সময় নূর মোহাম্মদ নারায়ণগঞ্জের এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ওই নির্বাচনের ফলাফল কারচুপি করার জন্য বিএনপি প্রানন্ত চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এসপি হিসেবে তিনি নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং সেই থেকে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির সুনজরে রয়েছেন। অন্যদিকে মোঃ আবদুল মান্নান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন শেষ করে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ৮৬ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই স্বাস্থ্যসেবা সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু ছাত্রাবস্থায় নূর মোহাম্মদ এবং মো. আবদুল মান্নান এর রাজনৈতিক মতাদর্শগত যে বিরোধ, সেই বিরোধ এখনো রয়ে গেছে।
উল্লেখ্য যে, জাসদ থেকে একটি অংশ তথাকথিত সত্যিকারের সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী তারা বাসদ গঠন করে মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে। অন্যদিকে, হাসানুল হক ইনু, আ স ম আব্দুর রব সমর্থিতরা জাসদেই থেকে যান। সেই সময় থেকেই জাসদ এবং বাসদের যতটা না আদর্শিক, তার চেয়ে পেশীশক্তিগত বিরোধ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাসদ-বাসদ বিরোধ আশির দশকে একটা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। সেই ছাত্ররাজনীতির বিরোধ পেশাগত জীবনে ভুলতে পারেননি এই দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এই দুই কর্মকর্তা কর্মজীবনেও দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল এবং দুজনই এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য সবসময় চেষ্টা করেছেন। দুজনের মধ্যে কখনোই সুসম্পর্ক ছিলো না বলে এলাকাবাসী জানান। নূর মোহাম্মদ এমপি হওয়ার পর তিনি এলাকায় একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। যেহেতু তিনি পুলিশের সাবেক আইজি ছিলেন সেহেতু প্রশাসন তার নিয়ন্ত্রণে আছে বলেও অনেকে মনে করেন। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতির সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেকটি জেলার দায়িত্ব একজন করে সচিবকে দেওয়ার প্রেক্ষিতে মো. আবদুল মান্নান কিশোরগঞ্জ জেলার দায়িত্ব পান। তখন তার প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়ে যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ছাত্র রাজনীতির এই বিরোধ এখন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চেপেছে। সচিব এবং এমপির দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগকে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
সূত্র : বাংলা ইনসাইডার