সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করেন, ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করা এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ড সংগঠিত করায় জিয়া এই খেতাবের অযোগ্য।
সম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি জামুকার সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দ্রুতই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে আসছে, জিয়াউর রহমান সরাসরি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করা হয়।
আওয়ামী লীগের নেতারা আরও বলেন, যে বা যারা খুনিদের মদদ দেয়, তারা স্বাভাবিকভাবেই অপরাধী। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়েছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের কোনো সম্মানজনক পুরস্কার বা খেতাব পেতে পারেন না।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার জন্য জিয়াউর রহমানকে এই সম্মানজনক রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়া হয়। তবে জিয়াউর রহমানের এই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া এবং তার ভূমিকা নিয়েও দীর্ঘ দিন ধরে প্রশ্ন তুলে আসছে আওয়ামী লীগ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তারা জিয়াউর রহমানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন। তাদের মতে, এ ধরনের একজন ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় খেতাবধারী থাকতে পারে না। এ জন্যই তার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা সঠিক।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের এক সেনা কর্মকর্তা জিয়ার কাছে চিঠি লিখেছিলো। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক, রশিদদের সহযোগিতা করেছিলো। ওই সব খুনিদের পুনর্বাসন করেছিলো। জামুকা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কোনো কারণ দেখছি না।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। জামুকা তার খেতাব বাতিলের যে প্রস্তাব করেছে তার সপক্ষে যুক্তি ও তথ্য প্রমাণ দেওয়ার জন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি তথ্য প্রমাণ তুলে ধরবে। কমিটি রিপোর্ট দিলে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর এমন অনেক কাজ জিয়াউর রহমান করেছে যা একজন মুক্তিযোদ্ধা করতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারদের হত্যা করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের মন্ত্রী করেছে। তার খেতাব বাতিলের যে সিদ্ধান্ত জামুকা নিয়েছে নিশ্চয়ই তার পেছনে যুক্তি আছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জামুকা তার ব্যাখ্যা দেবে।