1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ অপরাহ্ন

জিয়া-এরশাদের ‘বিচ্ছু সামশু’ হুইপ হয়ে বেপরোয়া

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১

জিয়াউর রহমানের হাত ধরে তিনি নাম লিখিয়েছিলেন জাতীয়তাবাদী যুবদলে। এর পরই হামলে পড়েন ছাত্রলীগ আর যুবলীগ নেতাকর্মীদের ওপর। এরশাদ সরকারের আমলে জাপা ক্যাডার হিসেবে তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পটিয়া থেকে চট্টগ্রাম মহানগরে। তিনি অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর। এই ‘তিনি’ হলেন সামশুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু সামশু, যিনি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ।

জানা গেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম দফায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপরই ভোল পাল্টে আবাহনী ক্রীড়াচক্রে নাম লেখানোর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলে ঢুকে পড়েন সামশুল হক চৌধুরী। অল্প সময়েই কূটকৌশল খাটিয়ে, হিংস্রতাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পর্যায়ে পৌঁছে যান তিনি। এ জন্য দলটির যে পর্যায়ের নেতাকর্মীকেই তিনি বাধা মনে করেছেন, তাঁকেই মামলা-হামলা দিয়ে সরাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি।

পটিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবে যাত্রা শুরু করা সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বরাবরই দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাটের অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে, তদন্তও হয়েছে দফায় দফায়। যথারীতি দুর্নীতি দমন কমিশনের নোটিশও হয়েছে তাঁর নামে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি তাঁর। সব অভিযোগকে ছাইচাপা দিয়ে তিনি তরতর করে উঠে গেছেন ওপরের দিকে। তাঁর নির্বাচনী এলাকা পটিয়ায় বেপরোয়া দখলবাজি, চাঁদাবাজি, হয়রানি, অত্যাচার, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে কমিশন বাণিজ্য পর্যন্ত সব কিছুর সঙ্গেই তাঁর পরিবারের সদস্যরা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন। এসব নিয়ে বারবারই তিনি বিতর্কিত হয়েছেন; ক্ষোভ, অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে খোদ দলীয় ফোরামেও। কিন্তু কোনো কিছুতেই তোয়াক্কা করেননি তিনি।

সেনা শাসক জিয়ার মুখেই খেতাব পাওয়া ‘বিচ্ছু সামশু’ কিভাবে যুবদলের থানা নেতা থেকে পরে সেনা শাসক এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নে ভূমিকা রাখেন, সেসব কথা ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে। সে সময় আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা হামলা চালানোর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী নেতা বনে যাওয়ায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রকৃতপক্ষে বিচ্ছু সামশুর অন্তরে বিএনপি-জাতীয় পার্টি; মুখে মুখে তিনি আওয়ামী লীগার।

১৯৮০ সালে সামশুল হক চৌধুরী যখন হকার নেতা ছিলেন, টাইপ মেশিন চুরির অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ দিন কারাভোগ করেন তিনি। সে সময় ডেইলি লাইফ পত্রিকায় এই খবর প্রকাশ হয়েছিল। পরে বিএনপির যুবদল হয়ে জাতীয় পার্টির যুব সংহতিতে যোগ দেন। ওই সময় নিউ মার্কেট মোড়ে আওয়ামী লীগের মিটিং পণ্ড করার জন্য বোমা হামলা চালান দলবল নিয়ে। রাজনীতিতে বারবার জার্সি পাল্টানো সামশুল হক চৌধুরী সর্বশেষ আবাহনী ক্রীড়াচক্রের মাধ্যম হয়ে যোগ দেন আওয়ামী লীগে।

দলে নিজের কিছুটা শক্তপোক্ত অবস্থান সৃষ্টি করেই তিনি মেতে ওঠেন পুরনো খেলায়। আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে জামায়াত-বিএনপি ও হাইব্রিডদের কাঁধে ভর করে তিনি আবারও নেমে পড়েন আওয়ামী নিধনের মিশন নিয়ে। তাঁর দখলদারি, আগ্রাসন ও দাম্ভিকতার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থক। পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মূলধারার নেতাকর্মীদের নামে বিভিন্ন সময় মিথ্যা মামলা দিয়ে কোণঠাসা করে রেখেছেন। এসব নিয়ে ছাইচাপা আগুন রয়েছে নেতাকর্মীদের মনে, ক্ষোভ, অসন্তোষ, বিরক্তিতে অনেকে রাজনীতির অঙ্গন থেকেই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।

সামশুর লোকজনই সব

ওয়ান-ইলেভেনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুফল তুলে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে পটিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সামশুল হক চৌধুরী। সেই থেকে শুরু। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ২০১৪ ও ২০১৯ এর দুই জাতীয় নির্বাচনেও জয়ী হয়ে এখন জাতীয় সংসদের হুইপ। আওয়ামী লীগ যখন টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় তখন ‘হ্যাটট্রিক’ এমপি সামশু। আওয়ামী লীগে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত হয়েছে। পটিয়ায় এখন হুইপ সামশু ও তাঁর নিকটাত্মীয়দের একচ্ছত্র আধিপত্য। ভূমি দখল, থানা-কোর্ট, ভূমি অফিস, টেন্ডারবাজি, শিল্প জোনের নিয়ন্ত্রণসহ সবখানেই হুইপ ও তাঁর ছেলে শারুনের ঘনিষ্ঠজনদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম রয়েছে। সামশুল হক চৌধুরীর এপিএস পরিচয়দানকারী এজাজ চৌধুরীর বাবার গোডাউনে ইয়াবার বড় চালানটি ধরা পড়লেও অদৃশ্য হাতের ইশারায় সব কিছু চাপা পড়ে গেছে। সেই এজাজ এখন গড়ে তুলেছেন কিশোর গ্যাং। ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও এলাকায় দাপট দেখান তিনি।

এমপির ভাই নবাবের কথার বাইরে শিল্প জোনে কারো টুঁ শব্দটি করারও সাহস নেই। সেখানকার স্ক্র্যাপ ব্যবসা থেকে শুরু করে সাপ্লাই বাণিজ্যের সব কিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণে। নবাবের বিচার বৈঠকই এলাকার জায়গা-জমিসংক্রান্ত বিরোধ মেটানোর অঘোষিত আদালত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুক্তভোগী অনেকে জায়গা-জমির বিরোধ নিয়ে থানায় অভিযোগ করলেও নবাব সেসব নিজের দায়িত্বে সমাধানের নামে নিজের স্বার্থ হাসিল করে থাকেন। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, পটিয়ার কেলিশহর, কচুয়াই, খরনা, জঙ্গলখাইন, কাশিয়াইশ, হাইদগাঁও, আশিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির টপ সয়েল বিক্রি করে কোটি টাকা অবৈধ আয় করেছেন হুইপের ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী ওরফে নবাব। ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পটিয়া থানা থেকে সম্প্রতি বদলি হওয়া ওসির সঙ্গেও প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েন নবাব। ২০১৫ সালে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে নবাবের বিরুদ্ধে কর্ণফুলী থানায় মামলা করেন এএইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক আনোয়ার হোসেন। মামলায় এমপির ছোট ভাইসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়।

হুইপের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এই আসন থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সামশুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, মাদক কারবার, ক্লাবকে জুয়ার আখড়া বানানো, বিদেশে অর্থপাচার, নালার ওপর মার্কেট নির্মাণসহ অনেক অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী এলাকায় সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোসহ জুয়ার আসর বসানোর পক্ষে বক্তব্য দিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন তিনি।

আলাদিনের চেরাগের মতো রাতারাতি আঙুল ফুলে বটগাছ বনে যাওয়া সামশুলকে বারবারই চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান নিয়ে সামশুল হক চৌধুরীর মন্তব্যে খোদ সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। ওই সময় ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সরকারের শুদ্ধি অভিযানে এই হুইপের নাম উঠে এলে তাঁর সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

শত শত কোটি টাকা অর্জন ক্লাব-জুয়ায়

দুদক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের আবাহনী ক্লাব থেকে গত পাঁচ বছরে সামশুল হক আয় করেছেন কয়েক শ কোটি টাকা। ঠিক এমনই একটি বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন একজন পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল আমিন। পরে তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্লাব থেকে ক্যাসিনোর মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সামশুল হক চৌধুরীর প্রধান সহযোগী ও তাঁর কথিত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএ) নুর উর রশীদ চৌধুরী ওরফে এজাজ চৌধুরীকে গত বছরের ২১ জানুয়ারি দুদক প্রধান কার্যালয়ে টানা ছয় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সূত্র : কালের কন্ঠ

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি