কথা ছিল জুনের শেষে বা আগামী জুলাইয়ের শুরুতে ভারতের নতুন সরকারের আমলে প্রথম বিদেশি অতিথি হিসেবে ভারত সফরে আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু পরিকল্পনায় শেষ মুহূর্তে কিছু রদবদল এনে এখন ভাবা হচ্ছে, বরং নরেন্দ্র মোদিই জুনের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফরে যেতে পারেন।
সেটা হলে প্রধানমন্ত্রিত্বের নতুন মেয়াদে এটা হবে নরেন্দ্র মোদির প্রথম কোনও দেশে দ্বিপক্ষীয় সফর এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০১৫ ও ২০২১ সালের পর এটা হবে তার তৃতীয় বাংলাদেশ সফর।
এর একটা প্রধান কারণ হলো, তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শেখ হাসিনা সদ্যই দিল্লি ঘুরে গেলেন। যদিও এটাকে সৌজন্য সফর বলাই বেশি সমীচীন, তারপরও ঢাকা চাইছে এবার বরং নরেন্দ্র মোদিই ঢাকা আসুন।
তা ছাড়া শেষবার যে দ্বিপক্ষীয় সফর হয়েছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, তখন শেখ হাসিনাই দিল্লিতে এসেছিলেন। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরেও জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে তিনি দিল্লিতে আসেন, যদিও সেটা ঠিক দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না।
কূটনৈতিক প্রোটোকল অনুযায়ী আসলে পরের দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীরই বাংলাদেশ যাওয়ার কথা। যদিও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে হাসিনা-মোদির আমলে প্রোটোকলের বাইরে গিয়েও বহু পদক্ষেপ নেওয়ার নজির আছে, এ ক্ষেত্রে কিন্তু ঢাকা চাইছে নরেন্দ্র মোদিই বরং বাংলাদেশে আসুন।
দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার যে একান্ত বৈঠক হয়েছে, সেখানেই এই সফরের জন্য আমন্ত্রণপত্র তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউন নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছে।
তবে সেই প্রস্তাবিত সফরের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি– যদিও জুনের শেষ দিকে কোনও একটা বা দুটো তারিখ নিয়েই ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী মোদি শেষবারের মতো বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন ২০২১ সালের মার্চে, যা ছিল সোয়া তিন বছর আগে। চলতি জুনে ঢাকায় গেলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০১৫ ও ২০২১ সালের পর এটা হবে তার তৃতীয় বাংলাদেশ সফর।
এর আগে গত মাসেই (মে) ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াটরা ঢাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার হাতে ভারত সফর করার আমন্ত্রণপত্র তুলে দিয়ে আসেন।
ভারতে তখন নির্বাচন চলছে পুরোদমে, নির্বাচনের মাঝপথে বা নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই এভাবে কোনও বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনা বিরল হলেও, শেখ হাসিনার জন্য তার ব্যতিক্রম ঘটাতেও ভারত দ্বিধা করেনি।
আর তার কারণও ছিল খুব সহজ, জুলাইয়ে শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত চীন সফরের আগেই যেন হাসিনা ভারতে ঘুরে যান এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বকে একটা বার্তা দেওয়া যায়, ভারতের দিক থেকে সেই তাগিদটা ছিল স্পষ্ট।
এখন যদি নরেন্দ্র মোদি সত্যিই চলতি জুনে বাংলাদেশ সফরে যান, তাহলে শেখ হাসিনার পরবর্তী ভারত সফর (যে আমন্ত্রণ তিনি ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছেন) বেশ কয়েক মাস অন্তত পিছিয়ে যাবে, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু শেখ হাসিনার চীন সফরের আগেই যে ভারত ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্তরে একটি দ্বিপক্ষীয় সফর সে ক্ষেত্রে হয়ে যাবে, তাতে কোনও ভুল নেই। শুধু দিল্লির বদলে বৈঠকগুলো হবে ঢাকায়, এই যা!