রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়- এমন অবস্থান থেকে সরে এসেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বরং শর্তসাপেক্ষে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। অপরদিকে রাশিয়ার শীর্ষ এক কূটনীতিক জানিয়েছেন যে, আলোচনার জন্য সবসময় প্রস্তুত মস্কো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে মধ্যবর্তী নির্বাচন। মধ্যবর্তী এই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি জয়ী হলে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে নেতৃত্ব হারাবে জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাট। এমন অবস্থায় ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার পথ বন্ধ হতে পারে। তাই আগেভাগেই শান্তি আলোচনার ইঙ্গিত দিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
অপরদিকে শীত চলে এসেছে। রাশিয়ার হামলার কারণে কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। সংকট দেখা দিয়েছে পানিরও। এমন অবস্থায় কঠিন শিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেটিও হয়তো মাথায় রাখছেন জেলেনস্কি।
ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার গভীর রাতে ‘রাশিয়াকে সত্যিকারের শান্তি আলোচনায় বাধ্য করতে’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
শান্তি আলোচনার জন্য শর্তগুলোও উল্লেখ করেছেন জেলেনস্কি। সেগুলো হলো- ইউক্রেনের সমস্ত দখলকৃত জমি ফিরিয়ে দেওয়া, যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির ক্ষতিপূরণ এবং যুদ্ধের বিচার।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনার হবে না বলে এক ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন জেলেনস্কি। তবে নতুন করে জেলেনস্কির মুখে আলোচনার কথা অনেকে বাগাড়ম্বর বলে মনে করছেন। এছাড়া এসব শর্তসহ কীভাবে আলোচনা এগোবে সেই বিষয়টিও অনেক কঠিন।
পশ্চিমা অস্ত্র এবং সাহায্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইউক্রেনের চাবিকাঠি ছিল। তবে মঙ্গলবার মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচন ইউক্রেনের জন্য ওয়াশিংটনের ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তার পরিমাণ এবং আকার নির্ধারণ করবে।
রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ জিতলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের পক্ষে ইউক্রেনের জন্য সামরিক ও অন্যান্য সাহায্যের বড় প্যাকেজ এগিয়ে নেওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
মঙ্গলবার রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রুডেনকো বলেছেন, চলমান সংঘাতের অবসানের জন্য কিয়েভের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় মস্কোর কোনো পূর্বশর্ত নেই। আলোচনার জন্য তাদের শুভ ইচ্ছা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোন পূর্বশর্ত নেই, মূল শর্ত ব্যতীত। সেটি হলো ইউক্রেনের সদিচ্ছা। রাশিয়া সবসময় শান্তি আলোচনার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।’
রাশিয়ার এই কূটনীতিক বলেন, ‘ইউক্রেন একটি আইন পাস করেছে, যা রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা পরিচালনা নিষিদ্ধ করে। এটি তাদের পছন্দ। (কিন্তু) আমরা সবসময় এই ধরনের আলোচনার জন্য প্রস্তুত।’
ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে কিনা জানতে চাইলে রুডেনকো বলেন, ‘না, আমরা (এ ধরনের আলোচনা) করছি না।’
রুডেনকো বলেছেন যে, মস্কো দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করার জন্য আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করছে।
তিনি আরও বলেন যে, কৃষ্ণ সাগরের শস্য চুক্তির ‘রাশিয়ান অংশ’ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। রাশিয়া ১৯ নভেম্বরের পর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সমস্ত কারণ বিবেচনা করবে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম দিকে বেলারুশ ও তুরস্কে কয়েক দফা আলোচনা করেছিল। মার্চ মাসে ইস্তাম্বুলে প্রতিনিধিদলের শেষ বৈঠকের পর আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে।
সেপ্টেম্বরে দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণে ইউক্রেনের সফল পাল্টা আক্রমণ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া আবার আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিল, কিন্তু ইউক্রেন তখন থেকেই সেই সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।