২০১১ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি নিয়েই আজ বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে ইংলিশদের বিপক্ষে নেমেছিল বাংলাদেশ। গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে ডেভিড মালানের ১৪০ রানের ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৬৪ রানের সংগ্রহ পেয়েছে জস বাটলারের দল। পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংলিশ বোলারদের তোপে ১০ বলে হাতে রেখেই ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। এতে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগারদের বিপক্ষে ১৩৭ রানের বিশাল জয় পায় জস বাটলারের দল।
লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের হয়ে যথারীতি ইনিংস উদ্বোধনে নামেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। ম্যাচের প্রথম ওভারেই তিন বাউন্ডারিতে ১২ রান তুলে নেন লিটন। তবে দ্বিতীয় ওভারেই খেই হারায় টাইগাররা। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে রিস টপলির বলে জনি বেয়ারস্টোর তালুবন্দী হয়েছেন তামিম। আউট হওয়ার আগে ১ রান করেন তিনি।এরপর উইকেটে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে রানের খাতা খোলার আগেই টপলির বলে লিভিংস্টোনকে ক্যাচ দেন তিনি। ম্যাচের শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে রীতিমতো চাপে পরা বাংলাদেশ। পরে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছিলেন লিটন।
তবে টাইগার দলপতিও ব্যর্থ ইনিংস বড় করতে। দলীয় ২৬ রানে টপলির বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। আউট হবার আগে ৯ বলে ১ রান করেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে ব্যাট করতে আসে বাংলাদেশে ভরসার নাম মিরাজ। তবে আজ ইনিংস বড় করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। দলীয় ৪৯ রানে ক্রিস ওকসের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। প্যাভিলিয়নের পথ ধরার আগে ৭ বলে ৮ করেন তিনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা।
সেখান থেকে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৬২ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন লিটন। একই সঙ্গে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটিও তুলে নেন টাইগার ওপেনার। অবশ্য সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে ক্রিস ওকসের বলে বাটলারের তালুবন্দী হন লিটন। আউট হওয়ার আগে ৭৬ রান করেন এ ডানহাতি ব্যাটার। তার বিদায়ে উইকেটে আসেন তাওহীদ হৃদয়। হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে দলীয় ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিক।
দেখেশুনে খেলে ম্যাচের ৩০তম ওভারের তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজের ৪৭তম ফিফটি হাঁকান মুশি। অবশ্য ফিফটির ইনিংস লম্বা করতে পারেননি এই ডানহাতি ব্যাটার। রিস টপলির বলে ডিপ থার্ডে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আদিল রশিদের তালুবন্দী হন মুশি। আউট হওয়ার আগে ৫১ রান করেন তিনি। শেষ দিকে হৃদয়ের ৩৯ ও শেখ মেহেদীর ১৪ রান কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে টাইগারদের। শেষ পর্যন্ত ১০ বল হাতে রেখেই ২২৭ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। ইংলিশদের হয়ে বল হাতে রিচ টপলি নেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট।
এদিন শুরুতে বাংলাদেশের হয়ে বোলিং ইনিংসের সূচনা করেন মুস্তাফিজুর রহমান। এরপর একে একে বোলিংয়ে এসেছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল হোসেন, সাকিব এবং মেহেদী মিরাজ। তবে কেউই আজ সফলতার দেখা পাননি। শুরুতে একবার মুস্তাফিজুর রহমানের এক বলে কট বিহাইন্ডের আবেদন করেছিল টাইগাররা। সেটির রিভিউও নিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব। তবে রিভিউতে দেখা যায় বল লেগেছে ডেভিড মালানের হাতের উপরের অংশে। এদিকে দুই ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো এবং মালান মিলে আজ দেখেশুনেই খেলেছেন টাইগার বোলারদের। দুজন মিলে জুটি গড়ে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ১১৫ রান এবং দুজনেই তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক।
এদিকে ইংলিশদের ওপেনিং জুটি যখন ভাঙতে পারছিলেন না কোনো টাইগার বোলারই তখন সফলতার মুখ দেখেন সাকিব। টাইগার অধিনায়কের বলে বোল্ড হয়ে ৫২রানেই ফিরে যান বেয়ারস্টো। এদিকে বেয়ারস্টো ফিরলেও থেমে থাকেনি ইংল্যান্ডের রানের চাকা। জো রুটকে সঙ্গে নিয়ে এ কাজ চালিয়ে যান আরেক ওপেনার মালান। রুটের সঙ্গে পরে মালান গড়েন ১৫১ রানের এক জুটি। ইনিংস সর্বোচ্চ এ জুটি গড়ার পথে ইংলিশ এই ওপেনার তুলে নিয়েছেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিও।
৯১ বলে সেঞ্চুরি করা মালান পরে শেখ মাহেদীর বলে বোল্ড আউট হয়েছেন। দলীয় ২৬৬ রানে সাজঘরে ফেরার আগে করেছেন নিজের ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৪০ রান। মালান ফেরার পর অবশ্য দ্রুতই বেশ কয়েকটি উইকেট তুলে নিতে পেরেছে বাংলাদেশী বোলাররা। ১০ বলে ২০ রানের ক্যামিও এক ইনিংস খেলে ইংলিশ অধিনায়ক বাটলার ফেরার পর দলীয় ৩০৭ রানে সাজঘরে ফিরেছেন ৬৮ বলে ৮২ রান করা রুট। রুটকে আউট করার পরের বলেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে লিভিংস্টোনকেও ফিরিয়েছেন শরিফুল।
৪২ তম ওভারে শরিফুলের ওই জোড়া আঘাতের পর আর ইংলিশদের হয়ে হাল ধরতে পারেননি কেউ। হ্যারি ব্রুককে ২০ রানে ফেরানোর পর স্যাম কারানকেও ফিরিয়েছেন শেখ মাহেদী। এরপর আদিল রশিদের উইকেটটিও তুলে নিয়েছেন টাইগার এই স্পিনারই। বল হাতে টাইগার এই স্পিনার আজ নিয়েছেন চারটি উইকেট। আর শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৬৪ রান।