গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিনদিনই ঊর্ধ্বমুখীতার মাধ্যমে পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে বেড়েছে সবকয়টি মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে টানা চার সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকলো শেয়ারবাজার। টানা চার সপ্তাহের এই ঊর্ধ্বমুখীতার কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে।
তবে গত সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়লেও লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। অবশ্য বড় মূলধনের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। ফলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পরও গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন ৭৭৯ কোটি টাকা বেড়ে গেছে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৭৭৯ কোটি টাকা। আগের তিন সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ১৮ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে চার সপ্তাহের উত্থানে বাজার মূলধন বাড়লো ১৯ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন বাড়লেও গত সপ্তাহে ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬৫টির। আর ৫৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এরপরও গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়ছে ৫১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৫৩ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪২ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ১১৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮২ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে বাড়ে ৯২ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
এছাড়া বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ৭০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩৮ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৪৭ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। তারও আগের সপ্তাহে বাড়ে ২৫ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
প্রধান ও ডিএসই-৩০ মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক। গত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ৩২ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৮ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ২৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তারও আগের সপ্তাহে বাড়ে ২০ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
সবকয়টি সূচক বাড়লেও ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ৯০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৮৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এদিকে, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৯১ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৯ হাজার ৫১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৪২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৬৩ কোটি ২০ লাখ ১ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৯৫ কোটি ৫০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ৩৬৫ কোটি ১৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, ইস্টার্ন হাউজিং, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ন্যাশনাল পলিমার এবং ওরিয়ন ইনফিউশন।