মুস্তাকিম নিবিড়ঃ
আজ ২৮ শে অক্টোবর শনিবার বিএনপির পূর্বঘেষিত মহাসমাবেশে সংবাদ সংগ্রহ করতে যেয়ে নজিরবিহীন হামলার শিকার হয় গণমাধ্যম কর্মীরা। গতকাল রাত থেকেই মহাসমাবেশ ঘিরে সকল সংবাদ জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে সংবাদকর্মীরা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গণমাধ্যমের উপর এমন আক্রমণাত্মক হামলার ঘটনা জাতি এর আগে কখনো দেখেনি। বাংলাদেশে মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম আছে বলেই বিরোধীরা অবলীলায় করে যাচ্ছে সরকারের সমালোচনা। সরকার বিরোধীদের সকল বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছে সকল গণমাধ্যমেই, তাহলে কেন এত আক্রোশ গণমাধ্যমের উপর? যে রাজনৈতিক সংগঠনটি নির্বাচন এবং ক্ষমতায় আসা ব্যতীত জনকল্যাণের কোন কর্মসূচিতে সরব নয়, তাদের রীতিমতো কাভারেজ দিচ্ছে বাংলাদেশের মুক্ত গণমাধ্যম। আজ তাদেরই মহাসমাবেশের বার্তা দেশের সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিল গণমাধ্যম কর্মীরা। তাহলে কেন এত বর্বরচিত হামলার শিকার হতে হলো সংবাদ কর্মীদের?
নিউ এইজের আহমেদ ফয়েজ, বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক সালমান তারেক শাকিল, ফটো সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন ও নিজস্ব প্রতিবেদক জোবায়ের আহমেদ, দৈনিক কালবেলার প্রতিবেদক রাফসান জানি, আবু সালেহ মুসা, রবিউল ইসলাম রুবেল এবং তৌহিদুল ইসলাম তারেক, ভোরের কাগজের ফটো সাংবাদিক মো. মাসুদ পারভেজ আনিস ও নুরুজ্জামান শাহাদাৎ, দৈনিক জাতীয় অর্থনীতির রুবিনা শেখ, জে,এ,টিভির রবিন তাজ ও খোকা আমিন, ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদক সালেকিন তারিন, ব্রেকিং নিউজের ক্রাইম রিপোর্টার কাজী ইহসান বিন দিদার, দৈনিক ইনকিলাবের ফটোসাংবাদিক এফ এ মাসুম, দৈনিক ইত্তেফাকের মাল্টিমিডিয়ার রিপোর্টার তানভীর আহাম্মেদ, একুশে টিভির রিপোর্টার তৌহিদুর রহমান ও ক্যামেরা পারসন আরিফুর রহমান, দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার সাংবাদিক আরিফুর রহমান রাব্বি, ইত্তেফাকের সাংবাদিক শেখ নাছের ও ফ্রিল্যান্সার মারুফ। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের চিত্র ধারণ করতে গেলে এবং পুলিশের উপর হামলার ফুটেজ নিতে গেলে গণমাধ্যমের উপর মার মুখী হয়ে ওঠে বিক্ষোপকারীরা। অমানবিক নির্যাতন করে আহত করা হয় গণমাধ্যমের প্রায় শত শত কর্মীদের।
স্বাধীনতার পর দেশ পরিচালনা করছে কোন না কোন রাজনৈতিক দল। আর সেই রাজনৈতিক দলগুলোই গঠন করেছে সরকার। যেহেতু বাংলাদেশ পুলিশ বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সেহেতু সরকার কর্তৃক পরিচালিত হওয়াটা স্বাভাবিক। দেশের জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের পবিত্র দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য। একবার ভেবে দেখেছেন কি? আপনি আমি রাতে শান্তির ঘুমটা যখন ঘুমাই, তখন কতগুলো পুলিশ সদস্য রাত জেগে আমাদের রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন? পুলিশের সমালোচনার পাশাপাশি পুলিশের আত্মত্যাগ ও ভালো দিকগুলো একবার বিবেচনা করে দেখা উচিত নয় কি? যখন যে দল সরকারে থাকে তখন তারা পুলিশ বাহিনী থেকে একটু বেশি সুবিধা নিয়ে থাকে? কারণ পুলিশ যে স্বায়ত্তশাসিত কোন প্রতিষ্ঠান নয়। সরকারে থাকলে রক্ষক আর রাজপথে থাকলে শত্রু যাদের ভাবছেন তারাই যে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চলছেন। নাগরিকদের নিরাপদে রাখার জন্য যেকোনো বড় ধরনের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের কঠোর হওয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে বলেই দেশ আজ আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তানের মতো অস্থিতিশীল অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি। “তবুও যত দোষ নন্দ ঘোষ ”
দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুদৃঢ় রাখতে একটু কঠোর হলেই যুগে যুগে হামলার শিকার হতে হয়েছে পুলিশ সদস্যদের। এসব হামলায় আহত হয়েছে শত সহস্র পুলিশ সদস্য। যেমনটি আজ রাজধানীকে স্থিতিশীল রাখার জন্য কঠোর অবস্থানে যেতে হয় পুলিশ বাহিনীকে, অতঃপর বিক্ষোভকারীদের হামলায় আহত হয় শতাধিক পুলিশ সদস্য এবং নিহত হন পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ।
তথাকথিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বলি হচ্ছে সাংবাদিক ও পুলিশ। তাহলে আন্দোলন মানেই কি পুলিশ সাংবাদিককে টার্গেট করা?