নিউজ ডেস্ক : কুমিল্লা সদরের বাসিন্দা একরাম হোসেন। মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের জন্য এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ করছিলেন।
তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকেরই ভিসা ও আকামার (কাজের অনুমতিপত্র) মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। জটিলতার কারণে আমরা এ মুহূর্তে সৌদি যেতে পারছি না। কিন্তু আমাদের মধ্যে যাদের ভিসা ও আকামার মেয়াদ ৮-১০ আছে তাদেরকে যাওয়ার সুযোগ করে দিলে নির্ধারিত সময়ে সৌদি আরব পৌঁছাতে পারব। কিন্তু ভিসা ও আকামার মেয়াদ শেষ হলে ভিসা ও আকামা জটিলতার কারণে আমাদেরও সৌদিতে পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’
মধ্যবয়সী একরাম হোসেন ওই পুলিশ সদস্যকে আরও বলছিলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে টোকেনের আশায় প্রতিদিন ছুটে এলেও টোকেন পাচ্ছি না। দয়া করে আমাদেরকে সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট পেতে টোকেন পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।’
একরাম হোসেনের মতো অনেকেই সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিটের জন্য নয়, টিকিট পেতে টোকেনের সিরিয়ালের জন্য পুলিশ কর্মকর্তা, আনসার সদস্য, পরিচিত হোটেল কর্মকর্তা-কর্মচারী, সৌদি এয়ারলাইন্স কার্যালয়ের কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা বা টোকেনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। ভাগ্যক্রমে টোকেন হাতে পেয়ে অনেকেই খুশিতে লাফিয়ে উঠছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো যেন ‘সোনার হরিণ’ হাতে পেয়েছেন। অপরদিকে যারা টোকেন পাচ্ছিলেন না, তাদের চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করা যায়।
স্বয়ংক্রিয় ভিসা ও আকামার মেয়াদ বৃদ্ধি এবং সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিটের টোকেনের দাবিতে আজ মঙ্গলবারও পথে নেমেছেন সৌদিপ্রবাসী কর্মীরা।
গতকালের মতো আজও সকাল থেকেই সৌদিপ্রবাসী কর্মীরা রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনের রাস্তায় জড়ো হন। ভিসা ও আকামার মেয়াদ বৃদ্ধি এবং সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিটের টোকেনের দাবি-সম্বলিত ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নামেন তারা। তবে গতকাল সড়ক অবরোধ করলেও আজ তারা হোটেলের বাইরে অবস্থান নিয়ে দাবি জানাতে থাকেন।
সৌদিপ্রবাসী এক নারীকর্মী বলেন, ‘তিনি গত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন। নিয়মমাফিক চাকরি ও বেতনভাতা পেয়েছেন। মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিতে কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হওয়ায় তিনি ভিসা ও আকামা ভোগান্তিতে পড়েন।
তিনি জানান, সৌদি আরবে কোম্পানির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আকামা ও ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করিয়ে এনেছেন। এখন গত তিনদিন ধরে সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট পেতে সিরিয়ালের টোকেনের জন্য ঘুরছেন কিন্তু পাচ্ছেন না।
ওই নারীকর্মী আরও বলেন, ‘ভালোমন্দ সব দেশেই আছে। তিনি গত কয়েক বছর সৌদিতে চাকরিকালীন সময়ে কখনোই কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি তাকে। সম্প্রতি তিনি বাড়ি থেকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে নামার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশ্নের মুখে পড়েন। নাম-পরিচয় দেয়ার পর যখন সৌদি আরবে যাবেন শোনেন তখন তাদের একজন বলেন, বিদেশে ভালো মহিলারা যায় না।’
তিনি বলেন, পেটের দায়ে বিদেশে চাকরি করতে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কষ্টার্জিত টাকা দেশে পাঠান। আর দেশের মানুষের মুখেই নেতিবাচক কথাবার্তা শোনা খুবই দুঃখজনক বলে ওই নারী মন্তব্য করেন।