ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেড় মাসের মাথায় পদত্যাগ করেছিলেন লিজ ট্রাস। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনের সময় গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে তিনি ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হয়েছিলেন।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনের সময় সাবেক এই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ফোন হ্যাক হয়েছিল। আর সেটি করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সন্দেহভাজন এজেন্টরা। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এই তথ্য সামনে এনেছে বলে রোববার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ব্যক্তিগত ফোনটি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে কাজ করা সন্দেহভাজন এজেন্টরা হ্যাক করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই এজেন্টরা ট্রাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কোয়াসি কোয়ার্টেং – যিনি পরে অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন – তার সাথে আদান-প্রদান করা ব্যক্তিগত বার্তা ছাড়াও আন্তর্জাতিক মিত্রদের সাথে আলোচনার ‘অত্যন্ত গোপনীয় তথ্যে বিশদভাবে’ প্রবেশাধিকার পেয়েছিল।
ডেইলি মেইল বলছে, হ্যাক হওয়া বার্তাগুলোতে ইউক্রেনের যুদ্ধ সম্পর্কে বিশ্বের অনেক দেশের সিনিয়র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্তা অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি এসব বার্তায় ইউক্রেনে অস্ত্রের চালান সম্পর্কে বিশদ বিবরণসহ অন্যান্য আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে মেইল আরও জানিয়েছে, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ফোন হ্যাক করে এক বছরের সমপরিমাণ বার্তা ডাউনলোড করে নেয় এজেন্টরা।
ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র ‘ব্যক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। তবে ওই মুখপাত্র বলেছেন, ‘সরকারের কাছে সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা রয়েছে। এতে মন্ত্রীদের জন্য নিয়মিত নিরাপত্তা ব্রিফিং এবং তাদের ব্যক্তিগত ডেটা রক্ষা করার পাশাপাশি সাইবার হুমকি প্রশমিত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
ডেইলি মেইল বলছে, বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের প্রচারণার সময় লিজ ট্রাসের ফোন হ্যাক হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হয়। কানজারভেটিভ পার্টির ওই নেতৃত্বের প্রচারণার মধ্য দিয়েই লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
তবে দায়িত্বনেওয়ার দেড় মাসের মাথায় ট্রাস পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর ট্রাস গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন এবং ঋষি সুনাক তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
ডেইলি মেইল বলেছে, বিদেশি এজেন্টদের হাতে পড়ে যাওয়া ওই বার্তাগুলোর মধ্যে এমন বার্তাও রয়েছে যেখানে ট্রাস এবং কোয়ার্টেং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সমালোচনা করেছিলেন। যা লিজ ট্রাসকে ‘ব্ল্যাকমেইলের সম্ভাব্য ঝুঁকির দিকে পরিচালিত করতে’ পারত।