মুস্তাকিম নিবিড়ঃ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতায় ঢাকায় আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া দের দৌরাত্ব অনেকটা থেমে গেলেও, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে একসময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সাঙ্গোপাঙ্গরা। এদের নিয়ন্ত্রক এখন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা। এমনকি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতেও তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সরকারি কাজ পাওয়ার দৌড়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এক সময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুসারীদের, টেন্ডার নিয়ে চালাচ্ছে মাফিয়া রাজত্ব। যদিও স্থানীয় পর্যায়ের চাঁদবাজ সন্ত্রাসের অস্তিত্ব কেবল অতীতের বিষময় স্মৃতি।
সন্ত্রাস অর্থ ত্রাস, ভয় বা ভীতি সৃষ্টি। সন্ত্রাসের মূল কথা হলো বলপ্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন করে কোনো উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা করা। সন্ত্রাস যেমন দুষ্কৃতিকারীরা করতে পারে তেমনি সমগ্র রাষ্ট্র বা সমগ্র বিশ্বের পটভূমিতে কোন সংগঠন ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটাতে পারে। দেশ বা আন্তর্জাতিক ভাবে যে বা যারা সন্ত্রাসবাদকে বহুমাত্রিক বা ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করতো তাদেরকে শীর্ষ সন্ত্রাসী আক্ষা দিয়েছিলো সরকার।
একসময় ঢাকায় এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছিল সন্ত্রাসী বাহিনী। যাদের নাম শুনলে আঁতকে উঠতো মানুষ। দিনে-দুপুরে তারা চাঁদা চেয়ে চিরকুট পাঠাতো। সঙ্গে পাঠাতো কাফনের কাপড়। অনেকেই নীরবে দাবিকৃত সেই চাঁদা দিয়ে দিতো। না দিলে জীবন দিতে হতো। তাদের সন্ত্রাস, দখল, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সাধারণ মানুষ। এক সময় এমন সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা তৈরি করে প্রশাসন তাদের নাম দিয়েছিল ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’।
২০০১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার শীর্ষ ২৩ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করে। যাদের কে ইন্টারপোল ও রাখে রেড নোটিশে। এদের ৮ জনকে ধরিয়ে দিতে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ধরিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার।
ডিএমপি সুত্রে জানা গেছে, আন্ডার ওয়ার্ল্ডের এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে, বাকিরা দেশের বাহিরে। তাদের সহযোগিরা অনেকটা আড়ালে থেকে তাদের নিজস্ব এলাকা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছিলো। এখনও বাইরে থেকে তাদের গ্যাং পরিচালনা করার প্রচেষ্টায় রয়েছে তারা। কেউ জামিনে মুক্ত হয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। তাদের মধ্যে কারও সহযোগী রা বিভিন্ন মামলায় ১ যুগের ও বেশি করাবাস শেষে নিজ এলাকায় ফিরে এসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এদের তালিকা ধরে আইনি ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তাদের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
সময় ২০০১-২০০৫
ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদাত হোসেন সিকদার, হাজী আহমদ কমিশনার, বিনয় সরকার বিনা কমিশনার, কাউন্সিলর নিউটন, ডেভিডদের মতো অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে সন্ত্রাস বাহিনী কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের আন্ডার ওয়ার্ল্ড সম্পৃক্ততা কিংবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে জনসাধারণের মাঝে সেসময়কার বিষাক্ত স্মৃতি এখনো ভীতি সঞ্চার করে, যা পুঁজি করতে মরিয়া ঢাকার সেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগীরা।
আপাতদৃষ্টিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত বা অসংগঠিত দুধরনেরই হতে পারে। জটিল, দীর্ঘস্থায়ী ও বড় সন্ত্রাসগুলো অপেক্ষাকৃত সংগঠিত অপরাধ চিন্তার ফসল। ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নিজেদের ইচ্ছা ও কল্পনাপ্রসূত চিন্তা সত্য জেনে পরিকল্পিতভাবে এমন ধ্বংসাত্মক কাজ করে যা রাষ্ট্র বা সমাজে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। এ সকল তত্ব সুনজরে রেখে সন্ত্রাস দমনে বতর্মান সরকার জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কারী বাহিনীর বিভিন্ন সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশ কে প্রায় সন্ত্রাসী ঝুকি হতে রেহাই দিয়েছে। যদিও আসন্ন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় প্রভাব বিস্তার ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়ে উঠছে এক সময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সাঙ্গোপাঙ্গরা, কেউ কেউ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শেষে আবারো রাজনীতির মাঠে সড়োব, যারা আবারো ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে । কেউ জামিনে বেড় হয়ে নিজেকে শুধরে নিয়ে জনকল্যাণে হয়ে উঠেছে জনগনের মধ্যমনি। জনমনে ভীতি সঞ্চার করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া সে সকল সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের নানান ভয়াবহ তথ্য নিয়ে দৈনিক জাতীয় অর্থনীতির ধারাবাহিক প্রতিবেদন চলবে।