রোমে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির বেশি বাড়তে না দিতে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছেন। তবে এ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি না দেওয়ার কারণে সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁরা।
সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিন গতকাল রবিবারের চূড়ান্ত ঘোষণায় ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো কার্বন নিঃসরণ অর্জনের প্রতিশ্রুতি নেই। জি-২০ নেতারা এই মর্মে এক ভাষ্যে সম্মত হয়েছেন এবং এই শতাব্দীর মাঝামাঝি বা তার কাছাকাছি সময়ে নেট জিরোতে পৌঁছানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এটি দুই বড় গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদনকারী চীন ও সৌদি আরবের অবস্থানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস জি-২০-এর বিবৃতিটিকে দুর্বল এবং ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও দূরকল্পহীন’ বলে সমালোচনা করেছে। সংগঠনটি বলেছে, জি-২০ নেতারা প্লাসগোতে গতকাল শুরু হওয়া জলবায়ু সম্মেলনের আগে ‘সময়ের দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে’। জি-২০ যদি হয় কপ-২৬-এর মহড়া, তবে বলতে হয়, ‘বিশ্বনেতারা তাঁদের সংলাপ আওড়াতে ভুলে গেছেন’, বলেন এর নির্বাহী পরিচালক জেনিফার মরগান।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান (থিংকট্যাংক) ইথ্রিজির টম বার্ক অবশ্য একমত হওয়া ভাষার পরিবর্তনের প্রশংসাই করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি অন্তত নেতারা আগে যা বলেছিলেন তার তুলনায় একটি পরিবর্তন। গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো বলা হয়েছে এই দশক সম্পর্কে। আগে তাঁরা শুধু ২০৫০ সালের কথা বলেছেন, যা অনেক দূরে।’
টম বার্ক বলেন, ‘এটি জি-২০ নেতাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জরুরি অনুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ, যার পেছনে ঘটনা ও বিজ্ঞান উভয়টি কাজ করছে। এটি একটি রাজনৈতিক সংকেত, যা কপের কাজে গতির সঞ্চার করবে এবং কপ সম্মেলনকে মতৈক্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। আমরা কিন্তু এই ভাষাও আশা করিনি।’
সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে এই বছরের মধ্যে কয়লাখনিতে বিদেশি বিনিয়োগ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা করতে চীন এরই মধ্যে সম্মত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ কয়লা ব্যবহারও সীমিত করতে সম্মত হয়েছেন নেতারা। তবে এ জন্য কী করা হবে তা নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি।। তুরস্কের পক্ষ থেকে কয়লাবিষয়ক অনুচ্ছেদের ওপর আপত্তি গতকাল দিনের প্রথম দিকেই তুলে নেওয়া হয়। এ সময় ক্লান্ত খসড়া প্রণেতা কর্মকর্তাদের তরফ থেকে উল্লাস ধ্বনি ওঠে। কভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই ছিল তাঁদের অনেকের জন্য প্রথম বড়, সশরীর সমাবেশ।
এবারের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে দেখা হচ্ছিল বহুপক্ষীকতার স্থায়িত্বের এক পরীক্ষা হিসেবেই। করোনাপীড়িত সারা বিশ্ব যখন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, তখন অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে বৃহত্তর কল্যাণের লক্ষ্যে দেশগুলো কতটা একজোট হতে পারে সেটাই ছিল দেখার।
সম্মেলনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ২০০৯ সালে পিটসবার্গে করা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করব, যাতে মাঝারি মেয়াদে অকার্যকর জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকিকে যুক্তিযুক্ত তথা প্রত্যাহার করা যায়।’
স্বাগতিক ইতালি সম্মেলনের এই ফলাফলে আনন্দিত। তারা বলছে, এটি ‘বরিস জনসনের হয়ে বোঝা টেনে দিয়েছে।’ উল্লেখ্য, বরিস জনসনের দেশেই কাল শুরু হয়েছে জলবায়ু সম্মেলন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের সমালোচনার দিকে ইঙ্গিত করে সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন তাঁরা বকবক শুনে ক্লান্ত। আমি মনে করি এবারের শীর্ষ সম্মেলনটিতে কথার বাইরে সারবস্তুও ছিল।’
দ্রাঘি আরো বলেন, ‘এখনই প্রথমবারের মতো পুরো জি-২০ জোট দেড় ডিগ্রি লক্ষ্যের বৈজ্ঞানিক বৈধতা স্বীকার করল। তারা নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছে।’ সূত্র : গার্ডিয়ান।