আফগানিস্তানের তালেবান সরকার নিয়ে প্রথম সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর শীর্ষ সম্মেলনে তালেবান সরকারের তীব্র সমালোচনা করলেন তিনি।
ভিডিও মাধ্যমে মোদী বললেন, “আফগানিস্তানে অস্থিরতার জেরে গোটা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বাড়বাড়ন্ত হতে পারে। অন্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিও এই ভাবে সরকার গড়তে উৎসাহী হবে। আফগানিস্তান থেকে অন্য দেশে যাতে সন্ত্রাস না ছড়ায়, সেটা সবাই মিলে সুনিশ্চিত করতে হবে।”
কূটনীতিকদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, তালিবান সরকারকে ভারতের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার আশু সম্ভাবনাই নেই। বরং ‘তালেবান-হক্কানি নেটওয়ার্ক-আল কায়দা’ অক্ষ সম্পর্কে বিশ্বকে সতর্ক করা, যথাসম্ভব প্রতিরোধ গড়াই নয়াদিল্লির অগ্রাধিকার। প্রথমে এসসিও-র উদ্বোধনী বক্তৃতায়, পরে এসসিও এবং রাশিয়ার সামরিক জোট সিএসটিও-র বৈঠকেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হন মোদী।
তালেবান সরকারে পাকিস্তান তথা আইএসআইয়ের প্রভাব স্পষ্ট। আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে আল কায়দার মতো জঙ্গি গোষ্ঠী যে ফের ভারত-বিরোধী হামলা চালাতে পারে, তা এসসিও-র দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, চীন ও রাশিয়ার সামনে স্পষ্ট করা প্রয়োজন ছিল সাউথ ব্লকের। মোদী সেটাই করেছেন। পাকিস্তানের নাম না করে বলেছেন, “আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসে অর্থের জোগান রুখতে এসসিও কঠোর বিধিব্যবস্থা তৈরি করুক।” আফগানিস্তানে অস্থিরতা চললে গোটা অঞ্চলে
মাদক, অবৈধ হাতিয়ার ও মানব পাচারও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন মোদী।
তালেবান সরকার প্রসঙ্গে মোদীর বক্তব্য, “আলাপ-আলোচনা ছাড়াই কাবুলে যে ভাবে সরকার গড়া হল, তাতে সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিত্ব নেই। মহিলা, সংখ্যালঘু-সহ সকলের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং এসসিও পদক্ষেপ করুক।”
আফগানদের অর্থনৈতিক দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে মোদী বলেন, “ভারত আগের মতোই সব রকম ভাবে এই দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত।”
গোটা এলাকার সংযোগ-সেতু ও সুফিবাদের জন্মভূমি মধ্য এশিয়ার প্রগতিশীল, মধ্যমপন্থী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে মোদী জানান, আর্থিক সম্ভাবনাময় এই এলাকায় বিনিয়োগ করতে ভারত আগ্রহী। তবে তার জন্য জরুরি পারস্পরিক আস্থা ও পরস্পরের সীমান্তের প্রতি শ্রদ্ধা।
এসসিও ঘোষণাপত্রে আফগানিস্তান এবং সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গ পৃথক ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, “এসসিও স্বাধীন, নিরপেক্ষ, ঐক্যবদ্ধ, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ এবং সন্ত্রাসমুক্ত আফগানিস্তানকে সমর্থন করে। সে দেশের সরকারে সমস্ত জাতি, ধর্ম এবং রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন।”
সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসে অর্থ জোগানো রুখতে এবং মৌলবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রসার রুখতে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াবে এসসিও-ভুক্ত রাষ্ট্রগুলি। কোনও দেশ যাতে আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গোদ্যান বানাতে না পারে, সেই লক্ষ্যেও সক্রিয় থাকবে এসসিও।