স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একসপ্তাহ পার হলেও মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে শতশত মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের এখানে মৃতের সংখ্যা ১৯৩৯ সালের ভূমিকম্পকে ছাড়িয়ে গিয়ে ৩১৬৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে থাকা সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫৭১৪ জনে দাঁড়িয়েছে; এটি দেশটির বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ও সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশে মৃতের মোট সংখ্যা।
রয়টার্স জানিয়েছে, তুরস্কের ৬ ফেব্রুয়ারির এ ভূমিকম্প ৩৭৩৫৭টি মৃত্যু নিয়ে চলতি শতাব্দীর ষষ্ঠ প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে উঠছে, এর আগে আছে ২০০৫ সালে পাকিস্তানে হওয়া ভূমিকম্প যেটিতে ৭৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সিরিয়ার আলেপ্পো শহর থেকে জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথ জানিয়েছেন, উদ্ধার অভিযান পর্বের ‘সমাপ্তি ঘনিয়ে আসছে’। এখন আশ্রয়, খাবার ও স্কুলগুলো চালু করার দিকে তাদের মনোযোগ সরাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাতে কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, তুরস্ক থেকে জাতিসংঘের আরও ত্রাণ সিরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।
তবে কোথাও কোথাও আশার ক্ষীণ আলোর ঝলক এখনো দেখা যাচ্ছে। সোমবার তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হতাইয়ের ধসে পড়া এক ভবনের আবর্জনার নিচ থেকে ১৮২ ঘণ্টা পর ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরকে উদ্ধার করা হয়।
এ দিন আদিয়ামান নগরীর ধসে পড়া অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসস্তূপ থেকে ছয় বছর বয়সী এক বালিকাকে উদ্ধার করা হয়। কাহরামানমারাস থেকে ১০ বছর বয়সী এক বালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছে। অন্তত আরও দুই শিশু ও এক পূর্ণবয়স্ক ব্য্যক্তিকেও এ দিন উদ্ধার করা হয়েছে।
গত সোমবার (৬ ফেব্রয়ারি) সকালে ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক এবং সিরিয়া। তার পর অন্তত ১০০ বার জোরালো আফটার শকে কাঁপে দুই দেশের মাটি। এতে গুঁড়িয়ে যায় দুই দেশের হাজার হাজার হাসপাতাল, স্কুল ও অ্যাপার্টমেন্ট ভবন। এতে গৃহহীন হয়ে পড়ে দেশ দুটির লাখ লাখ মানুষ।
সিরিয়া-তুরস্কের এই ভূমিকম্পকে শতাব্দীর সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও প্রাণঘাতী বলে মনে করছেন কেউ কেউ। বলা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিনে এই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে ৫০ হাজার। ১৯৩৯ সালের পর এটি তুরস্কের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প।