টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন নরেন্দ্র মোদী। শপথ নিলেন তাঁর মন্ত্রিসভার ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রীও। কে কোন মন্ত্রকের দায়িত্ব পেলেন? এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক।
মেদীর পরেই শপথ নেন রাজনাথ সিংহ। উত্তরপ্রদেশের লখনউ লোকসভা কেন্দ্র থেকে এ বারও ভোটে জিতেছেন রাজনাথ। ২০১৯ সালের মোদী সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন তিনি। এ বারও কি একই দায়িত্ব সামলাবেন?
তৃতীয় শপথগ্রহণ ছিল অমিত শাহের। গুজরাতের গান্ধীনগর থেকে লোকসভা ভোটে জিতেছেন অমিত। গত মন্ত্রিসভায় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অমিত যে ভাবে গত পাঁচ বছরে এই দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে এ বারও তিনিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব পাবেন। যদিও শেষ পর্যন্ত মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত জানা যাবে মঙ্গলবার।
বিজেপি সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিনি পরিবহন এবং সড়কপথ মন্ত্রী। এ ছাড়াও সামলেছেন, ক্ষুদ্র শিল্প ও মাঝারি সংস্থার মন্ত্রক, জাহাজ মন্ত্রক, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক, জলসম্পদ এবং নদী উন্নয়ন মন্ত্রকও। সেই নিতিন গডকড়ী রবিবার শপথ নিলেন অমিত শাহের পরেই। মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বিজেপি সাংসদ নিতিনকে এ বারের মন্ত্রিসভাতেও প্রথম সারির গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দেওয়া হবে বলে অনুমান।
রাজ্যসভার সদস্য। বাড়ি গুজরাতে। আবার বাংলার সঙ্গেও যোগ রয়েছে তাঁর। নড্ডা পশ্চিমবঙ্গের জামাতা। ২০২০ সাল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তার আগে ২০১৪ সালের মোদী মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০২৪ সালে আবার মন্ত্রিসভায় প্রত্যাবর্তন হল নড্ডার।
ছিলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির মধ্যপ্রদেশ জয়ের পরে শিবরাজ সিংহ চৌহানকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয়। তখন থেকেই জল্পনা চলছিল, তাঁকে কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হতে পারে। হলও তাই। এই প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেন শিবরাজ।
মেদীর মন্ত্রিসভার অন্যতম মহিলা মুখ— নির্মলা সীতারামন। অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন ২০১৯ সাল থেকে। তার আগে নিরাপত্তা মন্ত্রক এবং কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন। রাজ্যসভার সাংসদ নির্মলা রবিবারও তৃতীয় মোদী সরকারের মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন।
এস জয়শঙ্কর। ইনিও রাজ্যসভার সদস্য। গুজরাতে বাড়ি। ২০১৯ সাল থেকে বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব সফল ভাবে সামলাচ্ছেন বলে মনে করেন বহু বিরোধীও। রবিবার তিনি আবার শপথ নিলেন মোদীর মন্ত্রিসভার পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে। অনেকেই মনে করছেন এ বারও পুরনো দায়িত্বই সামলাবেন জয়শঙ্কর।
মোদীর মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হলেন হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এ বার হরিয়ানার কার্নাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হওয়া প্রবীণ বিজেপি নেতা মনোহরলাল খট্টর।
এই লোকসভা নির্বাচনে কর্নাটকে জোট গড়ে লড়েছিল বিজেপি এবং জেডিএস। জেডিএসের প্রতিষ্ঠা যাঁর হাত ধরে, তিনি দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া। রবিবার দেবেগৌড়ার পুত্র তথা জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। এ বার কর্নাটকের মাণ্ড্য কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি। এর আগেও দু’বার ওই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন তিনি।
মেদীর মন্ত্রিসভায় দীর্ঘ দিন রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন পীযূষ গয়াল। পরে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের দায়িত্বে আসেন। ইনিও রাজ্যসভার সাংসদ। রবিবার মোদীর মন্ত্রিসভায় শপথ নিলেন পীযূষ।
পর্ণমন্ত্রী হলেন বিজেপির আরও এক রাজ্যসভার সাংসদ ধর্মেন্দ্র প্রধান। ইনি দ্বিতীয় মোদী সরকারের শিক্ষামন্ত্রীও ছিলেন।
মন্ত্রী হলেন গয়ার সাংসদ তথা এনডিএ-র শরিক দল হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা (হাম)-র নেতা জিতনরাম মাঝিঁ। কিছু দিনের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি।
পূর্ণমন্ত্রী হলেন রাজীবরঞ্জন সিংহ ওরফে লল্লন সিংহ। নীতীশের দল জেডিইউ-এর এই নেতা বিহারের মুঙ্গের আসন থেকে জয়ী হয়েছেন।
পূর্ণমন্ত্রী হলেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। বর্তমানে রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ সোনোয়াল দ্বিতীয় মোদী সরকারের বন্দর এবং জলপথ মন্ত্রী ছিলেন।
পর্ণমন্ত্রী হলেন মধ্যপ্রদেশের টিকমগড়ের বিজেপি সাংসদ বীরেন্দ্র কুমার। দ্বিতীয় মোদী সরকারে সামাজিক ন্যায়বিচার মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
এনডিএ-র শরিক দল চন্দ্রবাবু নায়ডুর টিডিপির নেতা কে রামমোহন নায়ডু মন্ত্রী হলেন তৃতীয় মোদী সরকারের মন্ত্রিসভায়। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী হলেন কর্নাটকের ধারওয়াড় কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ প্রহ্লাদ জোশী।
মন্ত্রী হলেন, ওড়িশার সুন্দরগড়ের বিজেপি সাংসদ জুয়েল ওরাওঁ।
বিদায়ী মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী তথা বিহারের বেগুসরাই কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ গিরিরাজ সিংহ তৃতীয় মোদী সরকারেও পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন।
তিনি বিজেপি রাজ্যসভার সাংসদ। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন দ্বিতীয় মোদী সরকারে। রবিবার তৃতীয় মোদী সরকারেও মন্ত্রী হলেন অশ্বিনী বৈষ্ণব।
মন্ত্রী হলেন মধ্যপ্রদেশের গুনা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ তথা বিদায়ী মন্ত্রিসভায় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে।
মন্ত্রী হলেন রাজস্থানের অলওয়াড় কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ ভূপেন্দ্র যাদব।
রাজস্থান আরও এক জন পূর্ণমন্ত্রী পেল। মন্ত্রী হলেন রাজস্থানের জোধপুরের বিজেপি সাংসদ গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত।
মোদীর মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয় মহিলা পূর্ণমন্ত্রীর নাম অন্নপূর্ণা দেবী। ঝাড়খণ্ডের কোডারমা থেকে জয়ী হয়েছেন এই বিজেপি সাংসদ।
বিদায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য কিরেন রিজিজু তৃতীয় মোদী সরকারেও মন্ত্রী হলেন। ইনি অরুণাচল পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ।
পঞ্জাবে একটি আসনও জেতেনি বিজেপি। সেই পঞ্জাবও পূর্ণমন্ত্রী পেল। তৃতীয় মোদী সরকারের মন্ত্রী হলেন পঞ্জাবের রাজ্যসভার সাংসদ হরদীপ সিংহ পুরী।
ন্ত্রী হলেন গুজরাতের পোরবন্দর কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ মনসুখ মান্ডবীয়।
তেলঙ্গানার সেকেন্দরাবাদ কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ জি কিসান রেড্ডিও হলেন পূর্ণমন্ত্রী।
এনডিএ-র শরিক দল লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-র নেতা চিরাগ পাসোয়ান পূর্ণ মন্ত্রী হলেন তৃতীয় মোদী সরকারের। এই প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেন চিরাগ। বিহারের হাজিপুর থেকে লোকসভা ভোটে জিতেছেন তিনি।
পূর্ণমন্ত্রী হলেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি সাংসদ সি আর পাতিল। তৃতীয় মোদী সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনি শেষ পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন।
এ তো গেল মোদীর মন্ত্রিসভার পূর্ণমন্ত্রীর তালিকা। এর বাইরে পাঁচ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং ৩৬ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন রবিবার।
মোদী মন্ত্রিসভার স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হলেন হরিয়ানার বিজেপি নেতা রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহ, জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ জিতেন্দ্র সিংহ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আইন ও ন্যায়বিচার মন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘাওয়াল, মহারাষ্ট্রের শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে)-র সাংসদ প্রতাপরাও গণপতরাও জাদভ এবং এনডিএ-র শরিক দল আরএলডি-র নেতা, উত্তরপ্রদেশের সাংসদ তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধরি চরণ সিংহের পৌত্র জয়ন্ত চৌধরি।
মোদী মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেন বাংলার দুই সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এবং শান্তনু ঠাকুর। বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছেন সুকান্ত। শান্তনু জিতেছেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র থেকে। এর আগে শান্তনু কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু সুকান্ত এই প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেন।
এ ছাড়া, উত্তর প্রদেশ থেকে প্রতিমন্ত্রী হলেন কমলেশ পাসোয়ান, এসপি সিংহ বঘেল, অনুপ্রিয়া পটেল, পঙ্কজ চৌধরি, জিতিন প্রসাদ, কীর্তিবর্ধন সিংহ, বিএল বর্মা।
বিহার থেকে প্রতিমন্ত্রী হলেন রামনাথ ঠাকুর, নিত্যানন্দ রাই, সতীশচন্দ্র দুবে, রাজভূষণ চৌধরি।
মহারাষ্ট্র থেকে রামদাস অঠওয়ালে, রক্ষা খাড়সে, মুরলীধর মহল।
অন্ধ্র প্রদেশ থেকে প্রতিমন্ত্রী হলেন চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি, ভূপতি রাজু শ্রীনিবাস বর্মা।
কর্নাটক থেকে ভি সোমান্না, শোভা করন্দলজে, মধ্যপ্রদেশ থেকে দুর্গাদাস উইকে, সাবিত্রী ঠাকুর।
এছাড়া অজয় টামটা, শ্রীপদ নায়েক, কিসান পাল, রভনীত সিংহ বিট্টু, সুরেশ গোপী, এল মুরুগান, বন্দি সঞ্জয় কুমার, ভগীরথ চৌধরি, সঞ্জয় শেঠ, তোখান সাহু, হর্ষ মলহোত্র, নিমুবেন বামভানিয়া, জর্জ কুরিয়ান, পবিত্র মারঘেরিতা রবিবার শপথ নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী হিসাবে।