থানা পুলিশের সেবার মানোন্নয়নে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, থানায় কোনো ব্যক্তি জিডি করতে বা পুলিশি সহায়তা নিতে এলে পুলিশের কেউ টাকা দাবি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএমপির কোনো সদস্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে ডিএমপি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে বলেও জানান তিনি।
রোববার (২৪ অক্টোবর) ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপির সবাই একটি টিম, একটি পরিবার। কেউ ভালো কাজ করলে সবাই প্রশংসিত হবে, আবার কেউ খারাপ কাজ করলে সবাই আমাদের ভর্ৎসনা করবে। আমাদের জানমাল বাজি রেখে এ শহরের সম্মানিত নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সম্প্রতি কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য ডিএমপি তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িকতা বজায় রাখতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ঢাকা মহানগর যেহেতু দেশের রাজধানী, তাই এখানে যেন এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমাদের আরও বেশি তৎপর থাকতে হবে, চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়ানোর জন্য ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে নির্দেশনা দেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রতিবাদে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী নয়, সব সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ নিচ্ছে। জোনাল ডিসিরাও সে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগদান করে একাত্মতা ঘোষণা করে বলবে- আমরাও আপনাদের পাশে আছি। এরইমধ্যে ঢাকার বড় বড় পূজামণ্ডপ ও উপাসনালয়ে পুলিশের উপস্থিতি ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তাদের যে কোনও প্রয়োজনে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সেপ্টেম্বর মাসে অস্ত্র, মাদক, গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যকে পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার। এসময় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগসহ ১০টি বিভাগকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়।
এসময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মীর রেজাউল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) কৃষ্ণ পদ রায়, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মো. আসাদুজ্জামান, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুরস্কার পেলেন যারা-
সেপ্টেম্বর মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপির আটটি ক্রাইম বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে মিরপুর বিভাগ ও শ্রেষ্ঠ থানা হয়েছে পল্লবী থানা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনারদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন লালবাগ বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াছ হোসেন (চকবাজার জোন)। পুলিশ পরিদর্শক তদন্তদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন বংশাল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মীর রেজাউল ইসলাম আর পুলিশ পরিদর্শকদের (অপারেশনস্) মধ্যে প্রথম হয়েছেন মুগদা থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস্) আশীষ কুমার দেব।
শ্রেষ্ঠ এসআই যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন খিলক্ষেত থানার এসআই মো. আবুল কালাম আজাদ ও মিরপুর মডেল থানার এসআই সারোয়ার জাহান। শ্রেষ্ঠ এএসআই যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন মতিঝিল থানার এএসআই মো. হেলাল উদ্দিন ও চকবাজার মডেল থানার এএসআই রুহুল আমিন। শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারী অফিসার হয়েছেন খিলক্ষেত থানার এসআই মো. আবুল কালাম আজাদ। অস্ত্র উদ্ধার করে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শিহাব উদ্দিন। বিস্ফোরক উদ্ধারকরে প্রথম হয়েছেন লালবাগ বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াছ হোসেন (চকবাজার জোন)। মাদক উদ্ধার করে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন মুগদা থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস্) আশীষ কুমার দেব আর চোরাই গাড়ি উদ্ধার করে প্রথম হয়েছেন পল্লবী থানার এসআই মো. আতাউল মাহমুদ খান।
নয়টি গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। শ্রেষ্ঠ টিম লিডার হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন গুলশান জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মাহবুবুল হক সজীব। চোরাই গাড়ি উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার মিরপুর জোনাল টিমের এডিসি মো. সাইফুল ইসলাম। অস্ত্র উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার গুলশান জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মাহবুবুল হক সজীব। মাদকদ্র্রব্য উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার মিরপুর জোনাল টিমের এডিসি মো. সাইফুল ইসলাম। জঙ্গি গ্রেফতারে শ্রেষ্ঠ টিমের সম্মান অর্জন করেছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের এডিসি মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। অজ্ঞান ও মলম পার্টি গ্রেফতারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার ধানমন্ডি জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ ফজলে এলাহী।
আটটি ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে ট্রাফিক লালবাগ বিভাগ। শ্রেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার কোতয়ালী ট্রাফিক জোনের বিমান কুমার দাস। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ওয়ারী ট্রাফিক জোনের টিআই গোলাম মাওলা কবির। শ্রেষ্ঠ সার্জেন্ট যৌথভাবে সার্জেন্ট রামপুরা ট্রাফিক জোনের মো. মুহিবুল্লাহ ও সার্জেন্ট মোহাম্মদপুর ট্রাফিক জোনের মো. আব্দুল কাদের।