প্রথমে সবাইকে হতভম্ভ করে দিয়েছিল সৌদি আরব। এরপর চমকে দিয়েছিল জাপান। গতকাল এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া মাঠেই নেমেছিল বিশ্বকাপের ‘এশিয়ান ফ্লু’ নিয়ে। একেবারে হতাশ করেনি কোরিয়াও। জিততে না পারলেও উরুগুয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে এশিয়ার টাইগারখ্যাত কোরিয়ানরা। দুই পক্ষই সমান গতিতে বল দখলের লড়াইয়ে মেতেছিল। কোরিয়ার পাসিং ৪১৯ আর উরুগুয়ের ৫৪৭। গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে কোরিয়ার এলোমেলো শট ৬টি আর উরুগুয়ের ৭টি।
তবে উরুগুয়েকে আটকে দেওয়ার জন্য কোরিয়ার ডিফেন্স নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত সে দেশের মিডিয়া। গোলরক্ষক কিম সিয়ং গোং। সামনে চার ডিফেন্ডার কিম মুন হুয়াং, কিম মিন জাই, কিম উয়াং জুন ও কিম জিন সু। দারুণ এক রক্ষণের জাল তৈরি করে রেখেছিলেন তাঁরা গোটা ম্যাচেই। গ্যালারির সামনে বসে থাকা ছেলেটি সারাক্ষণ তাঁদের জন্য গলা ফাটিয়ে গেল। কিছু দূরে বসে থাকা উরুগুয়ের সাংবাদিক মাঝেমধ্যেই মোবাইল বের করে ছবি তুলছিলেন গায়ে কোরিয়ার পতাকা জড়ানো ছেলেটির।
ম্যাচ শেষে ওই ছেলেটিরই সাক্ষাৎকার নিলেন। উচ্ছ্বাস ছিল না তাঁর। ছেলেটি বিশ্বাস করে, কোরিয়ারই জেতা উচিত ছিল। অন্তত দুটি নিশ্চিত গোল মিস করেছে তাঁর দল। সাংবাদিকের কাছেও পরিসংখ্যান আছে, গোডিন আর ভালবারদের হেড আর কিক দুটি পোস্টবারে না লাগলে অন্তত দুই গোলে জিততে পারত উরুগুয়ে। দুই পক্ষই সমান গতিতে বল দখলের লড়াইয়ে মেতেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই গোলের মুখ খুলতে পারেনি। তার পরও এই গোলশূন্য ড্র ম্যাচে এগিয়ে থাকবে দক্ষিণ কোরিয়ায়।
অন্তত র্যাঙ্কিংয়ের হিসাবে সেটা ধরা যেতে পারে। লাতিনের উরুগুয়ে যেখানে ১৪, সেখানে এশিয়ার কোরিয়া ২৮। তা ছাড়া ম্যাচের আগে থেকেই আলোচনায় ছিল দুই দলের শারীরিক গঠনের পার্থক্যের কথা। কোরিয়ানদের ভয় ছিল স্পট কিক আর হেড নিয়ে।
কেননা সুয়ারেজ, কাভানি, গোডিন, নুনেজরা ডি-বক্সে তেমনই ভয়ংকর, যেমন ঠান্ডা তাঁরা মাঝমাঠে। বল পেলেই যেন গতির ফোয়ারা ছোটাতে পারেন তাঁরা। অবশ্য গতকাল সুয়ারেজের মুভমেন্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁর বয়স পঁয়ত্রিশ। ডি-বক্সের সামনে মাত্র দুটি সুযোগ তিনি নিজে তৈরি করতে পেরেছিলেন, মিস করেছেন আরও দুটি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ৬৬ মিনিটে তাঁকে ডেকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন কোচ।
অন্যদিকে কোরিয়ার ডিফেন্সের শক্ত বাঁধন আর তাদের গোলরক্ষণের বুদ্ধিমত্তা- গোটা ম্যাচে উরুগুয়ের সম্ভাবনাগুলো বাতিল করে দেয়। যদিও শুরুর ৩০ মিনিট মাঝমাঠে কোরিয়ারই বল দখলে ছিল। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে প্রথম বলার মতো দারুণ একটি সুযোগ পায় কোরিয়া। ক্রস পাসে গোলকিপারকে একা পেয়েও বল পোস্টের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন ফরোয়ার্ড হওয়াং উই জো। পুরো ম্যাচে ওই একবারই হাপিত্যেশ করার মতো ঘটনা ঘটেছিল কোরিয়ানদের জন্য। তবে তাদের এই লড়াইয়ের পর কিন্তু প্রচণ্ড হতাশ উরুগুয়ের ড্রেসিংরুম। পর্তুগাল আর ঘানার বাইরে অন্তত এই ম্যাচ থেকে তারা পুরো ৩ পয়েন্ট আশা করেছিল।