তীব্র তাপদাহে গত ২০০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। এ অঞ্চলের পর্যটনের হটস্পট হিসেবে পরিচিত থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামও পুড়ছে রেকর্ড তাপে। মানুষ, পশু-পাখির প্রাণ ওষ্ঠাগত। একই অবস্থা মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও লাওসে। উচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধি দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। অসহ্য গরমে প্রাণ যায় অবস্থা সাধারণ মানুষের।
আগে মোটর-চালিত সাইকেল মোপেডসে চেপে ১২ ঘণ্টা হ্যানয়ের বিভিন্ন স্পটে খাবার, পার্সেল পৌঁছে দিতে পারতেন ৪২ বছর বয়সী পোঙ। চলমান তাপদাহের কারণে গত দু’মাস তিনি আর মোপেডস চালাতে পারছেন না। সেখানকার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েও আর সুস্থ থাকতে পারছেন না তিনি। এ সময়তে হ্যানয়ে গড় তাপমাত্রা থাকার কথা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
হ্যানয়ের বর্জ্য ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ডিন ভ্যান হাং বলেন, এমন অসহনীয় গরমে কাজ চালিয়ে যেতে পারছি না। ময়লা থেকে ভয়াবহ পচা গন্ধ বের হচ্ছে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি।
বুধবার প্রকাশিত সিএনএন’র খবরে বলা হয়েছে, এপ্রিল ও মে সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উষ্ণতম মাস। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের আগে এই দু’মাসের তাপমাত্রা কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসে। কিন্তু এবারের তাপমাত্রা এমন পর্যায়ে ওঠে গেছে যা নিয়ে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়।
থাইল্যান্ডের ইতিহাসে এ বছর ১৫ এপ্রিল ছিল সবচেয়ে উষ্ণতম দিন। তাপমাত্রার পারদ ওঠে গিয়েছিল ৪৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। প্রতিবেশী দেশ লাওস মে মাসে টানা দু’দিন ৪৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল। অপরদিকে, ১ জুন ভিয়েতনামের ইতিহাসেও রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছিল ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ভিয়েতনামের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম জুন দিনের রেকর্ড ভেঙেছে।
বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক জোট বলেছে, এটি ২০০ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে। ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশনের (ডব্লিউডব্লিউএ) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে এমনটি জানিয়েছেন তারা। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এমনটি ঘটছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস ডেটার সিএনএন বিশ্লেষণে জানা যায়, এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত তাপমাত্রা প্রতি একক দিনে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রায় পৌঁছেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশেই এমনটি ঘটেছে।
এপ্রিল-মে তাপমাত্রা প্রবাহের ফলে হাসপাতালে ভর্তি হয় অনেক মানুষ। পরে স্কুল বন্ধ দিতেও বাধ্য হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অধিক তাপমাত্রায় রাস্তার ক্ষয়ক্ষতিসহ আগুনও ছড়িয়ে পড়ে অনেক অঞ্চলে। অনেক মানুষ মারা গেলেও মৃতের সংখ্যা অজানাই রয়ে গেছে। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে বায়ুমন্ডল উষ্ণ হয়ে ওঠে। ফলে আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি হয়ে যায়। তাই আর্দ্র তাপ তরঙ্গের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্র তাপ তরঙ্গও বেশি বেশি ঘটতে থাকে। জাতিসংঘের হিউম্যান ক্লাইমেট অনুমান করেছে, নির্গমন একই হারে বাড়তে থাকলে, পরবর্তী দুই দশকে তাপজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
চরম তাপমাত্রার কশাঘাত সবচেয়ে বেশি আঘাত করে দরিদ্র ও দুর্বলদের। অসহনীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে রাস্তার বিক্রেতা, ড্রাইভার, কৃষক, শ্রমিক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সব সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন। বিপজ্জনক এ তাপমাত্রার প্রবাহ তাদের স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
অধিক তাপমাত্রা হিটস্ট্রোকের অন্যতম কারণ। উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা ও গর্ভবতী ব্যক্তিদের জন্য জীবন আরও হুমকির হতে পারে। তাপ তরঙ্গের তীব্রতা শুধু স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে না, পরিবেশ ও জীবিকাকেও হুমকির মুখে ফেলে দেয়। তাই তাপের তীব্রতা কমাতে সরকারি পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক।
সরকারের কিছু পদক্ষেপ বিকাশ যেমন তাপের জন্য প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা, সবার জন্য সক্রিয় শীতলীকরল, নগর পরিকল্পনা ও তাপ পরিকল্পনার মতো পদক্ষেপগুলোর জন্য তাদের প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশনের বিজ্ঞানীরা।
এদিকে পাশের অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ায় বয়ে যাচ্ছে স্মরণকালের তীব্র তাপপ্রবাহ। ভারত ও পাকিস্তানে তাপমাত্রার পারদ ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর। বাংলাদেশের ওপর দিয়েও ভয়াবহ তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সূত্র: সিএনএন